পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য: কাঁচা খাবার কতটা নিরাপদ?
সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল অনেকেই তাদের কুকুর ও বিড়ালদের কাঁচা মাংস, অঙ্গ, মাথা অথবা হাড় সমৃদ্ধ খাবার পরিবেশন করার ছবি পোস্ট করে থাকেন। অনেকেই মনে করেন, এটি তাদের পোষা প্রাণীর জন্য উপকারী।
কিন্তু এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন মত। সম্প্রতি, বার্ড ফ্লুর সঙ্গে কাঁচা পোষা খাবারের যোগসূত্র নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলারের একটি বাজার রয়েছে কাঁচা পোষা খাবারের। এই খাবারে পর্যাপ্ত তাপ দেওয়া হয় না, ফলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
ডিসেম্বর মাসে, একটি পোষা খাদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা তাদের কাঁচা টার্কি মাংসের খাবারে H5N1 ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তা বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। জানা গেছে, এই খাবার খাওয়ার পরেই একটি বিড়ালের মৃত্যু হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিড়ালও একই ধরনের খাবার খাওয়ার পর বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছিল। এমনকি নিউইয়র্কে, আরও দুটি বিড়ালের শরীরে বার্ড ফ্লু ধরা পড়ে, যাদের কাঁচা খাবার খাওয়ানো হতো।
এই ঘটনাগুলো কাঁচা খাবারের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা খাবার তৈরির কিছু পদ্ধতি, যেমন – জমাটবদ্ধ করা বা শুকিয়ে নেওয়া, হয়তো মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে, তবে এগুলো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মারতে যথেষ্ট কার্যকর নয়।
বিশেষ করে বিড়ালদের জন্য H5N1 ভাইরাস খুবই মারাত্মক হতে পারে। কুকুরের ক্ষেত্রে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও, তাদেরও ঝুঁকি থাকে।
কাঁচা খাবার ব্যবহারের কারণ:
কিছু পোষ্য মালিক মনে করেন, কাঁচা খাবার তাদের পশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প। তারা বিশ্বাস করেন, এটি তাদের প্রাণীর কোট আরও উজ্জ্বল করে, দাঁত পরিষ্কার রাখে এবং হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
এছাড়াও, এই ধরনের খাবারে প্রিজারভেটিভ বা অন্য কোনো রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয় না, যা অনেক বাণিজ্যিক খাবারে পাওয়া যায়।
কিন্তু, প্রাণীবিদ্যায় পারদর্শী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাঁচা খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতার তেমন কোনো প্রমাণ নেই। বরং, এতে পুষ্টির অভাব হতে পারে।
যেমন – অতিরিক্ত প্রোটিন বা কম ফাইবার ইত্যাদি।
কাঁচা খাবার খাওয়ার ঝুঁকি:
কাঁচা খাবার খাওয়ানোর ফলে পোষা প্রাণী পরজীবী সংক্রমণ, যেমন – টক্সোপ্লাজমা গন্ডি (Toxoplasma gondii) দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এই পরজীবী খাদ্যবাহিত অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ।
এছাড়াও, ইকিনোকক্কাস গ্রানুলোসাস (Echinococcus granulosus) নামক একটি ফিতাকৃমি সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে, যা মানুষের শরীরে গেলে মারাত্মক হতে পারে।
কাঁচা মাংসে সালমোনেলা, ই. কোলাই এবং লিস্টেরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে, যা প্রাণী ও মানুষের গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।
বার্ড ফ্লু’র ঝুঁকি:
বার্ড ফ্লু এখন কাঁচা পোষা খাবারের মাধ্যমে সংক্রমণের আরেকটি কারণ। আক্রান্ত মুরগি ব্যবহারের কারণে এই ভাইরাস খাবারে প্রবেশ করতে পারে।
যদি কোনো বিড়াল বা কুকুর অসুস্থ বা মৃত বন্য পাখি খায়, অথবা বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত কোনো প্রাণী বা পাখির কাঁচা মাংস খায়, তবে তাদেরও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
করণীয়:
বিশেষজ্ঞরা পোষা প্রাণীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন:
বর্তমানে H5N1 ভাইরাসের বিরুদ্ধে পোষা প্রাণীদের জন্য কোনো টিকা বা চিকিৎসা নেই। তাই, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো খুবই জরুরি।
যদিও মানুষ থেকে পোষা প্রাণীর শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম, তবুও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
আপনার পোষা প্রাণীকে সুরক্ষিত রাখতে, কাঁচা খাবার দেওয়া বন্ধ করাই সবচেয়ে নিরাপদ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক