গাজায় ফিলিস্তিনি উদ্ধারকর্মীদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের উপর গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। হামাস এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং এতে অন্তত একজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার, রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায়, যা মিশর সীমান্তের কাছে অবস্থিত।
ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘সন্দেহজনক যান’ চিহ্নিত করার পরেই গুলি চালিয়েছিল।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় উদ্ধারকর্মীদের একটি দল নিখোঁজ হয়েছে।
এর আগে গত ২০ মার্চ, ইসরায়েলি সেনারা রাফায় অভিযান শুরু করে। এর দুই দিন আগে তারা প্রায় দুই মাস বিরতির পর গাজায় বিমান হামলা শুরু করে।
আন্তর্জাতিক আইনে চিকিৎসা কর্মী, হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্সের উপর হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা ‘হামাসের কয়েকটি যান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে নিকেশ করেছে’। তাদের ভাষ্যমতে, ‘কয়েক মিনিট পর আরও কিছু যান সন্দেহজনকভাবে সেনাদের দিকে এগিয়ে আসছিল… সেনারা তখন সন্দেহজনক যানগুলোর দিকে গুলি চালায়, এতে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হয়’।
তবে, গুলি চালানো যানগুলো থেকে প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করা হয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।
সামরিক বাহিনী আরও জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সন্দেহজনক যানগুলোর মধ্যে কিছু অ্যাম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর গাড়ি ছিল।
তারা আরও দাবি করে, গাজায় ‘সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের জন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো’ বারবার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে থাকে।
ঘটনার পরদিন গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানায়, তাল আল-সুলতা থেকে জরুরি ভিত্তিতে হতাহতদের উদ্ধারের জন্য পাঠানো ছয়জন উদ্ধারকর্মীর সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি।
শুক্রবার সংস্থাটি জানায়, তারা উদ্ধারকারী দলের প্রধান এবং উদ্ধারকারী যান—একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি অগ্নিনির্বাপক গাড়ি—খুঁজে পেয়েছে।
এছাড়া, প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি গাড়িকেও ‘ধ্বংসস্তূপে’ পরিণত করা হয়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম ইসরায়েলকে ‘রাফাহ শহরে বেসামরিক প্রতিরক্ষা ও ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট দলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও নৃশংস গণহত্যা’ চালানোর জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত উদ্ধারকর্মীদের উপর হামলা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ’।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক অফিসের প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, ১৮ মার্চ থেকে ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় শত শত শিশু ও বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীরা নিহত হচ্ছেন। অ্যাম্বুলেন্সের উপর গুলি চালানো হচ্ছে। প্রথম সারির উদ্ধারকর্মীরা নিহত হচ্ছেন’।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান