ভারতে পুলিশি নির্যাতনের চিত্রায়নের কারণে ‘সান্তোষ’ সিনেমার মুক্তি আটকে দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ‘সান্তোষ’ সিনেমাটি ভারতে মুক্তির অনুমতি পায়নি। দেশটির সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে সিনেমাটির প্রদর্শন আটকে দেওয়া হয়েছে। সিনেমায় পুলিশি নির্যাতন, নারীবিদ্বেষ, ইসলামভীতি এবং দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যে কারণে মুক্তির অনুমতি মেলেনি।
সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন ব্রিটিশ-ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সন্ধ্যা সুরি। উত্তর ভারতে এর প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছে। ‘সান্তোষ’-এর গল্প এক তরুণী বিধবাকে নিয়ে, যিনি পুলিশের চাকরি নেন এবং একটি দলিত মেয়ের হত্যার তদন্ত করেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রশংসিত হয়েছিল। এছাড়া, বাফটা অ্যাওয়ার্ডের সেরা ডেবিউ ফিচার বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল এবং সমালোচকদেরও বেশ ভালো রিভিউ জুটেছিল সিনেমাটির কপালে।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন শাহানা গোস্বামী, যিনি সম্প্রতি এশিয়ান ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন।
নির্মাতারা জানান, ভারতে সিনেমাটি নির্মাণের সময় চিত্রনাট্য জমা দেওয়া হয়েছিল এবং কোনো সমস্যা হয়নি। এমনকি, জানুয়ারিতে সিনেমাটি পরিবেশনার জন্য ভারতের সবচেয়ে বড় সিনেমা হলের মালিকেরাও রাজি ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি)-এর আপত্তির কারণে সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। সিবিএফসি’র মতে, সিনেমায় পুলিশের নেতিবাচক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
পরিচালক সন্ধ্যা সুরি এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, “বিষয়গুলো ভারতীয় সিনেমায় নতুন নয়, এর আগেও এমন অনেক ঘটনা বিভিন্ন সিনেমায় এসেছে।”
তিনি আরও জানান, সেন্সর বোর্ড সিনেমাটি থেকে বেশ কিছু দৃশ্য বাদ দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এত বেশি দৃশ্য কাটছাঁট করতে বলা হয়েছে যে, তা করলে সিনেমার মূল গল্পটাই থাকবে না।
সুরি জোর দিয়ে বলেন, সিনেমাটিতে পুলিশের কঠোর চিত্র তুলে ধরা হলেও, “আমার মনে হয় না, ছবিতে সহিংসতার এমন কোনো চিত্র আছে যা অন্য অনেক সিনেমায় দেখা যায়।”
বর্তমানে ভারতে সেন্সরশিপের বিষয়টি বেশ কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে তৈরি হওয়া সিনেমা বা টিভি সিরিয়াল প্রায়ই আক্রমণের শিকার হচ্ছে। অনেক সময় মুক্তির আগেই তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
সুরি জানান, সিনেমাটি ভারতে মুক্তি দেওয়া নিয়ে তিনি কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, তবে তিনি মনে করেন, এই সিনেমার বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের সিনেমাটি দেখাটা খুবই জরুরি ছিল। ২০১২ সালে দিল্লিতে বাসের মধ্যে এক নারীর ওপর হওয়া যৌন নির্যাতনের ঘটনা, যা নির্ভয়া কান্ড নামে পরিচিত, সেই ঘটনা থেকেই সিনেমাটি বানানোর অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি।
ভারতে পুলিশি নির্যাতন একটি পরিচিত সমস্যা। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় পুলিশ প্রায়ই নির্যাতন চালায় এবং গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুনও মানে না।
সিনেমাটিতে পুলিশের সহিংসতা এমনভাবে দেখানো হয়েছে, যা হয়তো অনেকের কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়েছে। পরিচালক বলেন, “সম্ভবত এই সিনেমায় সবাইকেই দুর্বল দেখানো হয়েছে এবং এখানে কোনো একক নায়ক নেই। সম্ভবত এটাই ভারতীয় সিনেমার অন্য গল্পগুলো থেকে এটিকে আলাদা করে তোলে, যেখানে প্রায়ই দেখা যায়, একজন সাহসী পুলিশ অফিসার একটি খারাপ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়ছে।”
সিনেমাটি নিয়ে ভারতীয় পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সিবিএফসি’র সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে।
তবে, একবার বোর্ডের রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর তাদের সঙ্গে আপিল বা আলোচনার কোনো সুযোগ থাকে না। বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। পরিচালক সুরি জানিয়েছেন, তিনি সিনেমাটি ভারতীয় দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান