যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে উদ্বেগে আন্তর্জাতিক মহল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আন্তর্জাতিক শান্তি ও সংঘাত নিরসনে কাজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস (USIP)-এর কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত সপ্তাহে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের গণহারে বরখাস্ত করার মাধ্যমে এই পদক্ষেপের সূচনা হয়।
জানা গেছে সরকারের কর্মদক্ষতা বিভাগ (Department of Government Efficiency – DOGE) এই সিদ্ধান্তের পেছনে কলকাঠি নাড়ে।
জানা গেছে, ২৮শে মার্চের মধ্যে বেশিরভাগ কর্মীর চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরানো হয়েছে। এর ফলে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে।
একইসঙ্গে, তাদের ওয়েবসাইটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে, রোনাল্ড রেগান-এর আমলে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে গবেষণা, নীতি বিশ্লেষণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ করে থাকে।
ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে জানাচ্ছে, করদাতাদের অর্থ অপচয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র আনা কেলি এক বিবৃতিতে জানান, “যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বছরে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার (বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৯১ কোটি টাকা, যা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে) খরচ করার কোনো মানে হয় না।
তবে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। ইউএসআইপি-র সাবেক আইনজীবী জর্জ ফোট এই বিষয়ে আদালতে একটি মামলা করেছেন। তার দাবি, শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি জানান, আগামী ২৫শে এপ্রিলের মধ্যে মামলার সব কাগজপত্র জমা দেওয়া হবে এবং ২৮শে এপ্রিল শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, ইউএসআইপি-র বার্ষিক বাজেট প্রায় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার এবং তাদের প্রায় ৮ কোটি ডলারের একটি তহবিলও রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে ব্যবহার করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এছাড়াও, ওয়াশিংটনের ফগি বটমে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও বিয়ের জন্য ভাড়াও দেওয়া হয়ে থাকে। সেটির ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা জানিয়েছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের হতাশ করেছে। তাদের মতে, ইউএসআইপি শুধুমাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য নিবেদিত একটি দল।
তারা বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে, যেমন – আফ্রিকার খনিজ সম্পদ বিষয়ক গবেষণা, কম্বোডিয়ায় মানব পাচার প্রতিরোধ এবং পাপুয়া নিউগিনিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ইউএসআইপি-কে সরাসরি অর্থ দেয়, তবে এর কর্মীরা ফেডারেল সরকারের কর্মচারী নন। তাই তাদের চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে ফেডারেল কর্মীদের মতো সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, এর ফলে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN