ইতালির সবুজ-শ্যামল প্রান্তরে শিল্পী মার্কানটোনিও রাইমন্ডি ম্যালারবার বাসস্থান, যা শিল্প, প্রকৃতি আর নকশার এক অপূর্ব মিলনস্থল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গড়া এই বাড়িটি যেন এক নীরব আশ্রয়, যেখানে শিল্পী তাঁর কল্পনার জগৎকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।
বার্টিনোরো ও চেসেনার মাঝে অবস্থিত এই বাড়িতে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাঁচার এক দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
মার্কানটোনিও রাইমন্ডি ম্যালারবা, যিনি একজন খ্যাতিমান ভাস্কর, শিল্পী এবং ডিজাইনার, তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাঁর এই বাড়িটি যেন তাঁর শৈল্পিক দর্শনের প্রতিচ্ছবি।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তিনি এই স্থানটি বেছে নিয়েছিলেন। এখানকার শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ তাঁকে নতুন করে ভাবতে ও কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।
তাঁর ভাষায়, “আমি চেয়েছিলাম এমন একটি বাড়ি, যা পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে, প্রকৃতির উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কিছু হবে না।”
বাড়ির বাইরের দিকটা দেখলে মনে হয় যেন সাদা পাথরের স্তূপ, যা ভূমি থেকে ধীরে ধীরে উপরে উঠেছে। বিশাল কাঁচের দেয়ালগুলি বাইরের প্রকৃতির দৃশ্যকে অনায়াসে ভিতরে নিয়ে আসে।
ভেতরের স্থানগুলো একটি সাধারণ নকশার পরিবর্তে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত, যা একটি গ্রামের মতো অনুভূতি দেয়। প্রতিটি স্থান আলো এবং ছায়ার খেলা উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।
বাড়ির অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে সাদা রঙের আধিক্য। সাদা দেওয়াল যেন এক একটি ক্যানভাস, যেখানে শিল্পকর্মগুলো নিজেদের উজ্জ্বলতা নিয়ে ফুটে ওঠে।
আসবাবপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী খুব যত্ন সহকারে নির্বাচন করা হয়েছে, যা শিল্পীর রুচি এবং শৈলীর পরিচয় বহন করে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় আসবাবপত্র, যা হয় শিল্পী নিজে ডিজাইন করেছেন, না হয় সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন জায়গা থেকে।
প্রতিটি বস্তুর নিজস্ব একটি গল্প আছে, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
বাড়ির বাইরের অংশে, টেরাসের উপর একটি আউটডোর বাথরুম এবং ঝর্ণা তৈরি করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই ব্যবস্থা করেছেন, যাতে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর সংযোগ সবসময় অটুট থাকে।
বাগানেও প্রকৃতির নিজস্বতা বজায় রাখতে চেয়েছেন তিনি। মার্কানটোনিও মনে করেন, “প্রতিটি বস্তুর নিজস্ব একটি অর্থ আছে, যা এটিকে বিশেষ করে তোলে।”
এই বাড়িতে শিল্পী তাঁর জীবনসঙ্গী, চিত্রকর অ্যালেজান্দ্রা ব্রুনির সঙ্গে বসবাস করেন। তাঁদের এই আবাসস্থল শিল্প এবং জীবনের এক সুন্দর মেলবন্ধন। এটি শুধু একটি বাড়ি নয়, বরং শিল্পীর স্বপ্ন আর কল্পনার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
তথ্যসূত্র: The Guardian