ডিজিটাল শিল্পের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাঁর সৃষ্টিশীলতা আর গভীর ভাবনার জন্য পরিচিত শিল্পী এড অ্যাটকিনস। বর্তমানে লন্ডনের টেট ব্রিটেনে তাঁর কাজের এক বিশাল প্রদর্শনী চলছে, যা শিল্পপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ সুযোগ।
অ্যাটকিনসের কাজে শোক, প্রযুক্তি, এবং মানুষের ভেতরের গভীর অনুভূতিগুলো এক নতুন আঙ্গিকে ধরা পরেছে।
এড অ্যাটকিনস, ৪২ বছর বয়সী এই শিল্পী, ডিজিটাল মাধ্যমে তৈরি করা তাঁর অদ্ভুত ভিডিওগুলোর জন্য সুপরিচিত। তাঁর কাজগুলি যেমন কৌতুকপূর্ণ, তেমনই কিছুটা ভীতি-জাগানো।
দর্শককে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায় তাঁর শিল্পকর্ম। তিনি প্রায়ই কম্পিউটার-নির্মিত (CGI) অবতারদের ব্যবহার করেন, যা তাঁর কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
২০১৪ সালের ‘রিবনস’ নামক কাজে তিনি ‘ডেভ’ নামের একজন চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি ছিলেন নগ্ন বুকের, ট্যাটু করা, এবং র্যান্ডি নিউম্যানের গান ভালোবাসতেন। এছাড়াও ২০২৩ সালের ‘পিয়ানোওয়ার্ক ২’-তে তিনি নিজের একটি প্রতিকৃতি তৈরি করেন, যেখানে ভার্চুয়াল এড-কে সুইস শিল্পী জুরগ ফ্রের একটি পরীক্ষামূলক সুর বাজাতে দেখা যায়।
অ্যাটকিনসের ছবিগুলোতে প্রায়ই শোনা যায় কাব্যিক সংলাপ, কিছু অস্পষ্ট শব্দ, মাঝে মাঝে টিনিটাসের শব্দ বা কারও শব্দ। তাঁর কাজগুলো একইসঙ্গে মুগ্ধ করে এবং বিভ্রান্ত করে।
অ্যাটকিনস নিজেই বলেন, তাঁর কাজগুলো ‘বোঝার’ জন্য নয়, বরং দর্শকদের মধ্যে কিছু অনুভূতির জন্ম দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য, যা খানিকটা ‘আলোড়িত’ করে তোলে।
এই প্রদর্শনীতে ডিজিটাল কাজের পাশাপাশি রয়েছে তাঁর নিজস্ব প্রতিকৃতি, টেক্সট-ভিত্তিক কাজ, এবং তাঁর মেয়ের টিফিনের জন্য আঁকা পোস্ট-ইট নোটের একটি সিরিজ।
এছাড়াও, তাঁর বাবার ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সময় লেখা ডায়েরি নিয়ে একটি নতুন কাজও রয়েছে, যেখানে অভিনেতা টবি জোন্স সেই ডায়েরি পাঠ করেছেন। তাঁর বাবার সেই ডায়েরি ছিল ভালোবাসার, অনুভূতির এবং জীবনের গভীর উপলব্ধির এক অসাধারণ দলিল।
অ্যাটকিনস তাঁর বাবার সেই ডায়েরির কথা বলতে গিয়ে বলেন, “এখানে অনেক কান্না আছে, অনেক সত্য আছে। তবে এটি সর্বজনীন। অনেকেই এই একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়।”
নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও খোলামেলা আলোচনা করতে পছন্দ করেন অ্যাটকিনস। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর স্মৃতিচারণমূলক বই ‘ফ্লাওয়ার’-এ তিনি তাঁর ভালোলাগা, উদ্বেগ, এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন।
সেখানে তিনি তাঁর শরীরের গঠন নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা যেমন বলেছেন, তেমনই তাঁর সন্তানদের প্রতি ভালোবাসার গভীরতাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সন্তান হওয়ার পর যেন মনে হয় আমার হৃদয়টা শরীর থেকে বাইরে চলে এসেছে।”
অ্যাটকিনস মনে করেন, প্রযুক্তি মানুষের অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে পারবে না। তাঁর মতে, “কোনো মেশিনই, এমনকি এক মিলিয়ন বছরেও, মানুষের মতো হতে পারবে না। এটি কখনোই একজন ব্যক্তি হবে না।”
এড অ্যাটকিনসের কাজগুলো আমাদের ডিজিটাল জগৎ এবং মানুষের ভেতরের জটিল সম্পর্ককে নতুনভাবে বুঝতে সাহায্য করে। টেট ব্রিটেনের এই প্রদর্শনীতে, শিল্প ও জীবনের এক অসাধারণ মিশ্রণ দেখা যায়, যা দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান