কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য ‘সহায়তা গোষ্ঠী’: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বর্তমান বিশ্বে কর্মপরিবেশে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, সমর্থন এবং অন্তর্ভুক্তির ধারণা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
উন্নত দেশগুলোতে এর অংশ হিসেবে কর্মচারী সহায়তা গোষ্ঠী বা ‘এমপ্লয়ি রিসোর্স গ্রুপ’ (Employee Resource Group – ERG) বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি হওয়া এই গোষ্ঠীগুলো বর্তমানে বাংলাদেশেও এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হচ্ছে।
মূলত, কর্মীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করাই এই ধরনের গোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য।
সাধারণভাবে, ‘কর্মচারী সহায়তা গোষ্ঠী’ হলো কর্মীদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা কর্মক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে।
এই গোষ্ঠীগুলো কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করে এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি নারী কর্মীদের জন্য একটি গোষ্ঠী থাকে, তবে সেই গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের পেশাগত জীবন এবং কর্মক্ষেত্রের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
এছাড়াও, নতুন কর্মীদের জন্য পরামর্শদাতা খুঁজে বের করা বা নেতৃত্ব বিকাশের মতো সুযোগও এখানে তৈরি হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের গোষ্ঠী কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়, যা কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এমন পরিস্থিতিতে কর্মী তার কোম্পানির প্রতি আরও বেশি অনুগত হন এবং দীর্ঘকাল ধরে সেখানে কাজ করতে আগ্রহী হন।
বিশেষ করে, বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আসা কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করতে এই ধরনের গোষ্ঠীগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তবে, কর্মচারী সহায়তা গোষ্ঠী নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে।
কেউ কেউ মনে করেন, এই ধরনের গোষ্ঠী কিছু কর্মীকে বাড়তি সুবিধা দেয়, যা অন্যদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।
আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে, কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে, এই গোষ্ঠীগুলোর গঠন এবং কার্যক্রমের বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।
সবার জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রাখা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বাংলাদেশে যদিও কর্মচারী সহায়তা গোষ্ঠীর ধারণাটি এখনো ততটা প্রচলিত নয়, তবে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি এবং কিছু স্থানীয় সংস্থায় কর্মীদের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সমর্থন তৈরির জন্য এই ধরনের গোষ্ঠীর গুরুত্ব অনেক।
ভবিষ্যতে, বাংলাদেশের কর্মপরিবেশে কর্মচারী সহায়তা গোষ্ঠীর ধারণা আরও জনপ্রিয়তা পেতে পারে, যা কর্মীদের কর্মজীবনকে আরও উন্নত করতে সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস