যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, সতর্কবার্তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সম্প্রতি সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা (TB) রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এর প্রকোপ বিশেষভাবে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে শিশুদের মধ্যে টিবি’র সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় অঞ্চলে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নতুন করে যক্ষ্মা শনাক্ত হয়েছে অথবা আগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে পুনরায় এই রোগ দেখা দিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। শুধু তাই নয়, গত বছর এই অঞ্চলে ৭,৫০০ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে।
এদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে ২,৪০০ জনের বেশি আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। শিশুদের আক্রান্তের এই হার মোট রোগীর প্রায় ৪ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ইউরোপীয় অঞ্চলে ১ লক্ষ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে নতুন করে যক্ষ্মা ধরা পড়েছে অথবা তাদের মধ্যে পুনরায় এই রোগ দেখা দিয়েছে। যদিও আগের বছরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যায় তেমন পরিবর্তন হয়নি, তবে টিবি’তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কিছুটা কমলেও, তা ২০২০ সালের আগের তুলনায় অনেক কম।
চিকিৎসা সাফল্যের হার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। নতুন করে টিবি শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার সাফল্যের হার ৭৫ শতাংশ, যেখানে বিশ্বব্যাপী এই সাফল্যের হার ৯০ শতাংশ হওয়া উচিত।
এছাড়া, বহু-ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (MDR-TB) নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ এই ধরনের টিবি’র চিকিৎসায় সাফল্যের হার ৬০ শতাংশের নিচে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব, উন্নত চিকিৎসার অভাব এবং বিদ্যমান চিকিৎসার সহজলভ্যতা না থাকার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়াও একটি বড় সমস্যা।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র গত এক দশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (WHO) প্রতি বছর ১৬৩ মিলিয়ন থেকে ৮১৬ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা করেছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়ে তহবিল বন্ধ করে দেয়।
যক্ষ্মামুক্ত বিশ্ব গড়া একটি স্বপ্ন নয়, বরং এটি একটি পছন্দ।
শিশুদের মধ্যে টিবি’র উদ্বেগজনক বৃদ্ধি প্রমাণ করে, এই প্রতিরোধযোগ্য এবং নিরাময়যোগ্য রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ক্লুগের এই উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে, সশস্ত্র সংঘাত, কোভিড-১৯ এর কারণে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়া এবং আর্থিক সহায়তার অভাবে টিবি’র প্রকোপ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপের এই পরিস্থিতি আমেরিকার জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ ইউরোপ ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে যা ঘটে, তা প্রায়ই আমেরিকাতেও দেখা যায়।
তাই, আমেরিকাতেও টিবি’র সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং সেখানেও স্ক্রিনিং বাড়ানো উচিত।
যক্ষ্মা একটি বায়ুবাহিত রোগ, যা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সহজে ছড়াতে পারে। টিবি’র ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি না থেকেও যে কেউ এতে সংক্রমিত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিল এবং এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে গত তিন বছর ধরে মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে ছিল করোনা, তবে এবার যক্ষ্মা আবার শীর্ষস্থানে ফিরে এসেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, যক্ষ্মা (TB) মারাত্মক রোগ এবং এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। সাধারণত, ৬ থেকে ৯ মাস ধরে ওষুধ সেবন করতে হয়।
চিকিৎসার পরেও টিবি’র জীবাণু শরীরে থেকে যেতে পারে। তাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে এটি পুনরায় সক্রিয় হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মা একটি বিপজ্জনক রোগ, তবে আধুনিক চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন।