আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর বিচারালয়ে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী নেতাদের বিচার প্রক্রিয়া বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়। সম্প্রতি ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তেকে আটক করে হেগে নিয়ে আসার ঘটনা এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত দুতার্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। এই প্রেক্ষাপটে, অন্যান্য প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
আইসিসি মূলত যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা এবং আগ্রাসনের মতো গুরুতর অপরাধের বিচার করে থাকে। এই আদালতের এখতিয়ারভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
তবে, আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেও আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানাগুলো দেওয়া হয়েছে।
তবে, পুতিন বা নেতানিয়াহুর গ্রেফতার হওয়াটা সহজ হবে না, কারণ তাদের দেশগুলো আইসিসির সদস্য নয় এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক জটিলতা রয়েছে।
দুতার্তের গ্রেফতারি সম্ভবত এই ধরনের বিচারের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। কিন্তু অনেক দেশই আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে দ্বিধা বোধ করে।
উদাহরণস্বরূপ, হাঙ্গেরি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে এবং আইসিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যেকার এই টানাপোড়েন বিচার প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তোলে।
আইসিসির দুর্বলতা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়েও অনেক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে, এই আদালতের বিরুদ্ধে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নেতাদের বেশি লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং অভিযুক্তদের কম সাজার হারও অনেক সময় সমালোচনার কারণ হয়।
তবে, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আইসিসির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও আইনের আওতায় আসবে, এমনটাই আশা করা যায়।
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারের ঘটনা সেই ধারণাই আরও জোরালো করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন