ডাকযোগে বন্ধুত্বের আনন্দ: হাতে গড়া বইয়ের আদান-প্রদান আজকাল ডিজিটাল দুনিয়ায় চিঠি লেখার চল প্রায় নেই বললেই চলে।
স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষজন যেন কাগজের পাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু এর মাঝেও এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা হাতে লেখা চিঠির মাদকতা থেকে বের হতে পারেন না।
তাদের কাছে ডাক বিভাগের মাধ্যমে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠানোটা এখনো আনন্দের বিষয়, এই কাজটি তারা করেন বিশেষ কিছু বইয়ের মাধ্যমে, যেগুলোকে বলা হয় ‘ফ্রেন্ডশিপ বুক’ বা বন্ধুত্বের খাতা।
বন্ধুত্বের খাতা (Friendship Book) আসলে কী?
ফ্রেন্ডশিপ বুক হলো হাতে তৈরি করা ছোট আকারের একটি খাতা, যেখানে বন্ধুত্বের বার্তা, পছন্দের জিনিস, ঠিকানা এবং আরো অনেক ব্যক্তিগত তথ্য লেখা থাকে।
এই খাতা তৈরি করা থেকে শুরু করে এর আদান-প্রদান— পুরোটাই একটা শিল্প, এই বইয়ের পাতায় পাতায় থাকে বিভিন্ন সজ্জা, স্টিকার, এবং পছন্দের উদ্ধৃতি।
যারা এই কাজে জড়িত, তাদের বলা হয় ‘সোয়াপার’, সোয়াপাররা তাদের বন্ধুত্বের খাতা অন্যদের সঙ্গে বিনিময় করে, এবং এই আদান-প্রদানের মাধ্যমেই তারা নতুন বন্ধু খুঁজে নেয়।
সোয়াপিংয়ের জগৎ: নিয়ম এবং কায়দা
ফ্রেন্ডশিপ বুকের আদান-প্রদান একটি বিশেষ সংস্কৃতি, এখানে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ‘এন অ্যান্ড এন’ (N&N) বা ‘নাইস অ্যান্ড নিট’ ধরনের খাতায় সামনের অংশে কোনো স্ট্যাপলার বা বাঁধাই দেখা যায় না।
আবার, ‘ডেকো’ (Deco) ধরনের খাতাগুলো বেশ আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়, কেউ যদি নিয়ম ভেঙে, অন্যের জিনিস চুরি করে বা নিম্নমানের জিনিস পাঠায়, তবে তাকে ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ করা হয়।
সোয়াপিংয়ের শুরু: পুরনো দিনের স্মৃতি।
একসময় আন্তর্জাতিক ইয়ুথ সার্ভিস (International Youth Service – IYS) নামক একটি সংস্থা ছিল, যারা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়তে সহায়তা করত।
তারা সারা বিশ্ব থেকে সমবয়সী ছেলেমেয়েদের খুঁজে বের করে তাদের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করত, ফ্রেন্ডশিপ বুকও অনেকটা সেই রকমই।
বর্তমানে ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইনস্ট্যান্ট মেসেজের যুগে হাতে লেখা চিঠির প্রচলন কমে গেলেও, ফ্রেন্ডশিপ বুকের এই সংস্কৃতি এখনো টিকে আছে।
সোয়াপিংয়ের সঙ্গে জড়িত কিছু মানুষের কথা।
অস্ট্রেলিয়ার আনা রায়ান-পাঞ্চ নামের এক লাইব্রেরিয়ান প্রায় ২০ জনের সঙ্গে নিয়মিতভাবে এই খাতা বিনিময় করেন।
তিনি জানান, এই কাজের মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন সৃজনশীলতার সুযোগ পান, তেমনই বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কও বজায় রাখতে পারেন।
শার্লিন নামের ৫৪ বছর বয়সী এক সোয়াপার জানান, তিনি ক্রুশেট বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের মাধ্যমে তার প্রথম পেন ফ্রেন্ড খুঁজে পেয়েছিলেন।
এরপর ফ্রেন্ডশিপ বুকের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি এর প্রেমে পড়েন।
ফ্রেন্ডশিপ বুকের ভবিষ্যৎ।
ফ্রেন্ডশিপ বুকের আদান-প্রদান শুধু একটি শখের বিষয় নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতি।
এর মাধ্যমে মানুষজন পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করে এবং হাতে লেখা চিঠির প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে।
এই সংস্কৃতি ডিজিটাল যুগেও টিকে আছে, যা প্রমাণ করে, বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখনো মানুষের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান