গরিলা শাবকের যত্ন: একজন চিড়িয়াখানা কর্মীর মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা
মা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মানুষের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের একটি চিড়িয়াখানার ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেখানকার একজন কর্মী, অ্যালান টয়েন, একটি গরিলা শাবকের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেছেন, যা তাকে মাতৃত্বের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছে।
২০১৬ সালের ঘটনা এটি। অ্যালান টয়েন নামের ওই ব্যক্তি পেশায় একজন চিড়িয়াখানা রক্ষক ছিলেন। সাত বছর ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত।
ব্রিস্টল চিড়িয়াখানায় কাজ করার পাশাপাশি তিনি তার সঙ্গিনী এবং দুই সৎ সন্তানের সঙ্গে থাকতেন। তবে, তাদের পরিবারে নতুন অতিথির আগমনের প্রস্তুতি চলছিল।
গরিলা মা, কেরার স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয় আফিয়া নামের একটি গরিলা শাবকের। জন্মের পর মা কেরা’র শারীরিক অবস্থার কারণে আফিয়ার স্বাভাবিকভাবে মায়ের দুধ পান করা সম্ভব ছিল না।
তাই, আফিয়ার দেখাশোনার দায়িত্ব এসে পরে অ্যালান টয়েনের ওপর। এরপর শুরু হয় এক অন্যরকম যাত্রা।
আফিয়াকে প্রথমে বাড়ি নিয়ে আসার পর টয়েন অনুভব করেন, একটি শিশুর দেখাশোনা করা কতটা কঠিন। অল্প সময়ের মধ্যেই, তারা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করে।
টয়েনের কাঁধে চড়ে, তার হাত ধরে, আফিয়া যেন এক নতুন জগৎ খুঁজে পায়। তাদের এই সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে।
আফিয়ার জন্য টয়েনকে তার জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। তাকে নিয়মিত আফিয়ার খাবার তৈরি করতে হতো, ঘুমের সময় তার পাশে থাকতে হতো।
এমনকি, আফিয়ার শরীরের গন্ধের সঙ্গেও তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। দিনের বেলা, তারা চিড়িয়াখানার অন্যান্য গরিলার সঙ্গে সময় কাটাতেন, বিশেষ করে আফিয়ার মা কেরার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতেন।
যদিও কেরার শারীরিক অবস্থার কারণে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
আফিয়ার বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। ধীরে ধীরে আফিয়া খেলাধুলা করতে শেখে, টয়েনের সঙ্গে খুনসুটি করে।
টয়েন বলেন, আফিয়ার হাসিমুখ দেখলে তার খুব ভালো লাগত।
প্রায় সাত মাস ধরে এই বিশেষ পরিচর্যা চলেছিল। এরপর, যখন আফিয়া একটু বড় হলো, তখন তাকে অন্য একটি গরিলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, যিনি তার দেখাশোনা করতে রাজি হয়েছিলেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে টয়েন মাতৃত্বের এক নতুন সংজ্ঞা খুঁজে পান। তিনি বুঝতে পারেন, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এবং যত্ন কিভাবে একটি পরিবারের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতে পারে।
এই অভিজ্ঞতা তাকে তার নিজের পরিবারের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হতে শিখিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।