শিরোনাম: শারীরিক প্রতিবন্ধকতা: সমাজে নারী ও অন্তর্ভুক্তি।
প্রতিবন্ধকতা জয় করে সমাজে নিজেদের স্থান তৈরি করতে সংগ্রাম করা নারীদের নিয়ে একটি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সাংবাদিক ফ্রান্সেস রায়ান। ফ্রান্সেস রায়ানের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের অধিকারের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।
ফ্রান্সেস রায়ান একজন সাংবাদিক এবং লেখক। ২০১৭ সালে ফ্লু আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এরপর থেকে তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন। তাঁর এই অসুস্থতা এবং সমাজে প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে তিনি একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘হু ওয়ান্টস নরমাল?’। ফ্রান্সেস রায়ানের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন নারীরা সমাজে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন।
যুক্তরাজ্যের একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ সবসময় বা প্রায়শই জনপরিসরে চলাচলে সমস্যার সম্মুখীন হন। সরকারি হিসাবে, সেখানকার মাত্র ৯ শতাংশ আবাসনে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সমাজের সুযোগগুলোও সীমিত। বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও দোকানের মাত্র ১৫ শতাংশে শ্রবণ সহায়ক ব্যবস্থা রয়েছে, খেলাধুলার স্থানগুলোতেও তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব দেখা যায়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন নারীদের জন্য শুধু অবকাঠামোগত সুযোগের অভাবই নয়, আয়ের ক্ষেত্রেও বৈষম্য বিদ্যমান। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ হয় প্রতিবন্ধী অথবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাথে বসবাস করে। ফ্রান্সেস রায়ানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন, কীভাবে প্রতিবন্ধী নারীরা প্রায়ই সমাজে নেতিবাচক ধারণার শিকার হন। অনেকে তাঁদের অক্ষমতাকে অস্বীকার করে এবং তাঁদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার। নারীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার পুরুষের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। সমাজে তাঁদের কণ্ঠস্বর কম শোনা যায় এবং তাঁদের সমস্যাগুলো সেভাবে আলোচনা করা হয় না।
তবে, ফ্রান্সেস রায়ান মনে করেন, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নারীরা তাঁদের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারেন। সমাজের প্রচলিত ধারণা ভেঙে দিয়ে, তাঁরা তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, অনেক প্রতিবন্ধী নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন, যেমন- রাজনীতি, ব্যবসা, অভিনয়, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, এবং সাংবাদিকতা। উদাহরণস্বরূপ, গ্রেটা থানবার্গ, বিলি আইলিশ, এবং সেলিনা গোমেজের মতো নারীরা তাঁদের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সমাজে পরিচিতি লাভ করেছেন।
ফ্রান্সেস রায়ান-এর এই আলোচনা প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করবে। তাঁর অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও একজন নারী সুখী ও সফল হতে পারেন। সমাজের উচিত তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাঁদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করা, যাতে তাঁরা সমাজে তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান