স্তন নিয়ে জীবন: জীন হান্না এডেলস্টাইনের অভিজ্ঞতা। জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে ছিল স্তন।
কৈশোর থেকে শুরু করে মাতৃত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন, এবং অবশেষে স্তন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই—এই প্রতিটি পর্যায়ে স্তন যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। জীন হান্না এডেলস্টাইন তাঁর জীবনের এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন একটি হৃদয়স্পর্শী লেখায়।
ছোটবেলায় আমেরিকার রক্ষণশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠা জীন-এর কাছে স্তন ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতার নাম। সমাজের চোখে নারীর শরীরের এই অংশটি কেমন—কামনা, কৌতুক, নাকি উদ্বেগের বিষয়, সেই ধারণা ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সিনেমা দেখা, এইসবের মধ্যে দিয়ে স্তন নিয়ে তাঁর নিজস্ব ভাবনা তৈরি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে জীন পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে রাতের বেলা ক্লাবগুলোতে যাওয়া এবং বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয়।
এই সময়ে স্তন নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে।
এরপর কাজের সূত্রে তিনি পা রাখেন লন্ডনে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা হয় তাঁর।
কখনও বারের পেছনের সারিতে, কখনও আবার সাংবাদিকতার জগতে—স্তন যেন তাঁর জীবনের নানা বাঁকের সাক্ষী ছিল।
জীবনে ভালোবাসার মানুষ খুঁজে পাওয়াটা সবসময় সহজ ছিল না। রাতের পার্টিতে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও স্তনের একটা ভূমিকা ছিল।
তবে সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ খুঁজে বের করাটা কঠিন ছিল।
কেরিয়ারের শুরুতে পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে কিছু অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব আসত, যা জীনকে হতাশ করত।
অনেক সময় এই ধরনের ঘটনার পর তিনি হতাশ হয়ে পড়তেন।
এরপর আসে মাতৃত্বের স্বাদ। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর স্তন যেন নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে শুরুতে অনেক সমস্যা হলেও, ধীরে ধীরে তিনি এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠেন।
কিন্তু সব ভালো ঘটনারও একটা শেষ আছে। এরপর তিনি যখন কর্মজীবনে ফিরে যান, তখন অফিসের পরিবেশে দুধ সংরক্ষণেও তাঁকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
জীবন এগিয়ে যায়, আর এরই মাঝে জীন জানতে পারেন, তিনি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত।
এই খবর তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুটি স্তনই বাদ দিতে হয়, যা তাঁর জন্য ছিল এক কঠিন মুহূর্ত।
অস্ত্রোপচারের পর কৃত্রিম স্তন প্রতিস্থাপন করা হয়। জীন-এর ভাষায়, তাঁর আসল স্তনগুলোর থেকে এই কৃত্রিম স্তনগুলো ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
এই পুরো জার্নিটা ছিল শারীরিক, মানসিক এবং আবেগপূর্ণ। জীন হান্না এডেলস্টাইনের এই গল্প আমাদের জীবনের গভীর কিছু সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
তাঁর অভিজ্ঞতা শুধু তাঁর একার নয়, বরং অনেক নারীর কাছেই পরিচিত। স্তন নিয়ে তাঁর এই সংগ্রাম, তাঁর শরীরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এবং জীবনের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি—সবকিছুই আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত জীন হান্না এডেলস্টাইনের প্রবন্ধ অবলম্বনে।