নতুন ‘স্নো হোয়াইট’ ছবিতে সৌন্দর্য ও নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন বিতর্ক।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পরেই আলোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে। একদিকে যেমন সিনেমাটির গল্প ও নির্মাণশৈলী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তেমনই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও অনেক বিতর্ক।
সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাচেল জেগলার। তাঁর অভিনয় নিয়ে অনেকে যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, তেমনই অনেকে তাঁর নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়াও, সিনেমার অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং গল্পের কিছু বিষয় নিয়েও বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকেই এর বিষয়বস্তু, কাস্টিং এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। এমনকি, ইসরায়েলের প্রতি গ্যাল গ্যাডটের সমর্থন থাকায় অনেকে সিনেমাটি বয়কট করারও ডাক দিয়েছেন।
বিতর্ক এখানেই থেমে থাকেনি, বরং তা বিভিন্ন সময়ে আরও বেড়েছে। সমালোচকেরা মনে করছেন, ডিজনির এই নতুন সংস্করণ পুরোনো ক্লাসিকের ধারণাকে যেন নতুন মোড়কে উপস্থাপন করতে চাইছে।
তবে, এই সিনেমাকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, তা হলো—নারীর সৌন্দর্য এবং বার্ধক্য নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।
ছবিতে দেখানো হয়েছে, রানী তার সৌন্দর্যের জন্য কতটা উদ্বিগ্ন এবং কীভাবে সে চিরযৌবন লাভের চেষ্টা করছে।
এই বিষয়টি বর্তমান সমাজের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। প্রতিনিয়ত নারীদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়—বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সৌন্দর্য কমে যাচ্ছে।
এই ধারণা এতটাই গভীর যে, তা যেন সংস্কৃতি যুদ্ধের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের সমাজে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর সুন্দর থাকার এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।
ত্বকচর্চা থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার—যেন নিজেকে তরুণ দেখানোর জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত।
সমাজের এই চাপ তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে।
সৌন্দর্য ধরে রাখার এই চেষ্টা শুধু ব্যয়বহুলই নয়, বরং এটি এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতাও তৈরি করে, যা সমাজের জন্য মোটেও ইতিবাচক নয়।
ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে মেকআপ নিয়ে আমার একটি অভিজ্ঞতা আজও মনে আছে।
স্কুলের এক অনুষ্ঠানে সবাই মিলে বরফের ডিস্কো করার পরিকল্পনা করি।
সেই সময়ে, আমার এক বন্ধু তার মায়ের কথা উল্লেখ করে, যিনি বলেছিলেন— “অন্তত চল্লিশ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের মেকআপ করা উচিত নয়, কারণ মেকআপ হলো বয়সের ছাপ ঢাকার জন্য।”
সেই কথাগুলো আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।
স্নো হোয়াইট-এর গল্প যেন সমাজের এই কঠিন বাস্তবতাকে আরও একবার সামনে নিয়ে আসে।
গল্পে, রানী তার সৌন্দর্যের জন্য এতটাই উদ্বিগ্ন যে, সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সবসময় নিজেকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে।
এই বিষয়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে সামাজিক মাধ্যম নারীদের মধ্যে নিজেদের নিয়ে হীনমন্যতা তৈরি করে।
নতুন ‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমাটি সম্ভবত এই বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে।
আমাদের সমাজের সৌন্দর্য বিষয়ক ধারণা এবং নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান