ভুটানের আকাশে, যেখানে মেঘ আর পাহাড়ের মিতালি, সেখানেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন বিমানবন্দর— পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Paro International Airport)। এই বিমানবন্দরে অবতরণ এতটাই কঠিন যে, সারা বিশ্বে মাত্র ৫০ জন পাইলট এই কাজটি করতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত।
পাহাড় ঘেরা এই বিমানবন্দরে নিরাপদে বিমান নামানো যেন এক অসাধারণ দক্ষতা ও সাহসের পরীক্ষা।
ভুটান, যা চীন ও ভারতের মাঝে অবস্থিত, দেশটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এই রাজ্যের রাজধানী থিম্পু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,৭১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
আর পারো বিমানবন্দরের উচ্চতা ৭,৩৮২ ফুট। এই উচ্চতার কারণে বিমানের ইঞ্জিনকে বাতাসকে আরও দ্রুত ভেদ করতে হয়, যা অবতরণকে আরও কঠিন করে তোলে।
এছাড়াও, বিমানবন্দরের কাছাকাছি থাকা উঁচু পর্বতমালা এবং তীব্র বাতাস পাইলটদের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
পারো বিমানবন্দরের রানওয়েটি তুলনামূলকভাবে ছোট, মাত্র ৭,৪৩১ ফুট লম্বা। এর দু’পাশে রয়েছে বিশাল পাহাড়।
এই কারণে, পাইলটরা অবতরণের ঠিক আগ মুহূর্তে রানওয়েটি দেখতে পান। এখানে বিমান অবতরণের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
কোনো পাইলট যদি সামান্য ভুল করেন, তবে তা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
ভুটানের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা, ড্রুক এয়ার (Druk Air), এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে বিমান পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তাদের পাইলট ক্যাপ্টেন চিমি দর্জি, যিনি ২৫ বছর ধরে এই সংস্থায় কর্মরত, তিনি জানান, “পারোতে বিমান চালানো কঠিন, তবে তা বিপজ্জনক নয়।
কারণ এটি যদি বিপজ্জনক হতো, তবে আমি অবশ্যই এই কাজ করতাম না।” তিনি আরও বলেন, “এখানে স্থানীয় দক্ষতা ও অঞ্চলের জ্ঞান খুবই জরুরি।
আমরা একে ‘এরিয়া কম্পিটেন্স ট্রেনিং’ বলি।
আবহাওয়ার দিক থেকেও পারো বিমানবন্দরের পরিস্থিতি বেশ প্রতিকূল। সাধারণত, সকালের দিকে আবহাওয়া শান্ত থাকে, তাই দিনের প্রথম ভাগে বিমান অবতরণ করানো হয়।
দুপুরের পর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে শক্তিশালী বাতাস সৃষ্টি হয়, যা বিমান চালনার জন্য অনুকূল নয়।
বর্ষাকালে, অর্থাৎ জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে, এখানে প্রায়ই বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়, যা বিমান চলাচলের জন্য আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।
তবে, ভুটানের আকাশপথে পরিবর্তন আসছে। দেশটির দক্ষিণে, ভারত সীমান্তের কাছে গেলেফু (Gelephu)-তে একটি নতুন বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এখানকার ভূমি পারোর চেয়ে অনেক বেশি সমতল। ফলে, এখানে দীর্ঘ রানওয়ে তৈরি করা সম্ভব হবে এবং বৃহত্তর বিমানগুলিও সহজে চলাচল করতে পারবে।
এর ফলে ভবিষ্যতে ভুটানে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ তৈরি হবে, যা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলবে।
ড্রুক এয়ার স্থানীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়।
ক্যাপ্টেন দর্জি নতুন প্রজন্মের পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং বর্তমানে ভুটানে প্রায় ৫০ জন লাইসেন্সপ্রাপ্ত পাইলট রয়েছেন।
আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন