ভ্রমণে কার্বন মনোক্সাইড (Carbon Monoxide) : নীরব ঘাতক থেকে বাঁচতে সচেতন হোন।
ভ্রমণ আমাদের জীবনে আনন্দ আর নতুন অভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে আসে। প্রিয়জনদের সাথে সুন্দর একটি ছুটি কাটানোর জন্য আমরা অনেক সময় বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করি। কিন্তু ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকাটা খুব জরুরি।
বিশেষ করে হোটেলের কক্ষে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের উপস্থিতি আমাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সম্প্রতি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে জানা গেছে যে, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের কারণে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণকারীরা গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন এবং এমনকি তাদের মৃত্যুও হয়েছে। এই গ্যাসটি “নীরব ঘাতক” নামে পরিচিত, কারণ এটি গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং স্বাদহীন।
ফলে, মানুষ সহজে এর উপস্থিতি টের পায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে হোটেল, মোটেল এবং রিসোর্টে ৯০০ জনের বেশি মানুষ কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, যার মধ্যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই আক্রান্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছিল শিশু।
হোটেলগুলোতে কেন কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর (Detector) বসানো হয় না? এর প্রধান কারণ হলো অনেক দেশে, বিশেষ করে আমেরিকার বাইরে, এই ধরনের ডিটেক্টর স্থাপন করা বাধ্যতামূলক নয়।
তাই, অনেক হোটেল কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয় না। তবে, কিছু কিছু দেশে, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্যে, নতুন তৈরি হওয়া বা সংস্কার করা হোটেলগুলোতে কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর স্থাপন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ভ্রমণের সময় নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, একটি পোর্টেবল কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর কিনে সঙ্গে রাখা।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের পোর্টেবল ডিটেক্টর পাওয়া যায়। একটি নির্ভরযোগ্য ডিটেক্টর আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “ফার্স্ট অ্যালার্ট” (First Alert) ব্র্যান্ডের একটি পোর্টেবল ডিটেক্টর-এর কথা বলা যেতে পারে, যা সহজেই যেকোনো বৈদ্যুতিক সংযোগে ব্যবহার করা যায়।
এই ধরনের ডিটেক্টরের দাম সাধারণত ৪০ মার্কিন ডলারের মতো, যা বাংলাদেশি টাকায় (আনুমানিক) ৪,৪০০ টাকার কাছাকাছি।
কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস শরীরে প্রবেশ করলে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন – মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, দ্রুত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, বুকে ব্যথা, বিভ্রান্তি এবং জ্ঞান হারানো।
এই ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।
ভ্রমণে গিয়ে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষার জন্য সচেতনতা খুবই জরুরি। তাই, ভ্রমণের আগে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের বিপদ সম্পর্কে জেনে, একটি পোর্টেবল ডিটেক্টর কিনে সঙ্গে নিন।
সেই সাথে, হোটেলের কক্ষে কোনো গ্যাসের গন্ধ পেলে বা অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা দেখলে দ্রুত হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানান এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ এবং নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা।