মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রম বন্ধের উদ্দেশ্যে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে থাকা সরকারের কর্মদক্ষতা বিভাগ (Department of Government Efficiency – DOGE) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরোর (Bureau of International Labor Affairs – ILAB) মাধ্যমে পরিচালিত হতো।
জানা গেছে, ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন DOGE এই তহবিল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম বিষয়ক ব্যুরো, গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে প্রায় সাত কোটি আশি লক্ষ শিশুকে শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই সংস্থাটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুদান দিত, যা দুর্বল শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করত।
খবর অনুযায়ী, উজবেকিস্তানে জোরপূর্বক শ্রমিকদের দ্বারা তুলা চাষ বন্ধ করা, মেক্সিকোতে কৃষি শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার কোকো (cacao) খামারে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ বন্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোও এই সহায়তার আওতায় ছিল।
শিশুশ্রম বিরোধী সংগঠন ‘চাইল্ড লেবার কোয়ালিশন’-এর সমন্বয়কারী রেইড মাকি জানিয়েছেন, “আমরা শিশুশ্রম নির্মূলের পথে ছিলাম, কিন্তু এখন যদি আইএলএবি-কে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি বিপরীত দিকে মোড় নিতে পারে। শিশুশ্রমের বিস্তার ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ফেডারেল সরকারের ব্যয় সংকোচন এবং অর্থের অপচয় রোধের কথা উল্লেখ করেছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শ্রমিক অধিকার দুর্বল হয়ে পড়বে এবং শিশুশ্রমের মতো সমস্যাগুলো আরও বাড়বে।
এ ব্যাপারে, আমেরিকান ফেডারেশন অফ লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনস (AFL-CIO)-এর আন্তর্জাতিক পরিচালক ক্যাথরিন ফিঙ্গোল্ড বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে আমরা আশঙ্কা করছি, বিশ্বজুড়ে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও, জোরপূর্বক শ্রম ও শিশুশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যা বাড়বে।”
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি শিশু শ্রমিক রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি ৯০ লক্ষ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। এই শিশুদের অনেকে কোকো বীজ সংগ্রহের মতো বিপজ্জনক কাজে জড়িত থাকে, যেখানে তারা ভারী বোঝা বহন করে এবং ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এবং বাণিজ্য সংস্থা এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা মনে করে, আইএলএবি-র কাজ ছিল শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য পরিবেশ তৈরি করা।
তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে মার্কিন শ্রমিকদের বিদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, যেখানে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত নয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে শ্রম দপ্তরের কর্মীরাও চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। দপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মীকে হয় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে অথবা আগেভাগেই অবসর নিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশেও শিশুশ্রম একটি গুরুতর সমস্যা। পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা হয়। আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে, বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার ও শিশুশ্রম নিরসনের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তাই, এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস