শেয়ার বাজারে মন্দা: বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কি?
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে চলমান উদ্বেগের মধ্যে, বিশ্বের বৃহত্তম শেয়ার বাজার, ওয়াল স্ট্রিট আবার একটি মন্দার দিকে যাচ্ছে কিনা সেই আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতির উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের উপর এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
শেয়ার বাজারের মন্দা (Bear Market) আসলে কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোনো নির্দিষ্ট সূচক, যেমন S&P 500 অথবা Dow Jones Industrial Average, যদি তার আগের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ২০ শতাংশ বা তার বেশি নিচে নেমে আসে এবং এই পতন যদি বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকে, তবে তাকে ‘মন্দা’ হিসেবে ধরা হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের মূল্য হারাতে শুরু করেন।
ওয়াল স্ট্রিটের এই মন্দা সৃষ্টির পেছনে মূল কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শেয়ার বাজারের মন্দা সাধারণত ১৩ মাস স্থায়ী হয়, এবং এর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৭ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে S&P 500 সূচক গড়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত।
কারণ, বাজারের এই উত্থান-পতন দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের একটি অংশ। দ্রুত শেয়ার বিক্রি করে দিলে লোকসান হতে পারে।
বরং, বাজারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের কৌশল নেওয়া যেতে পারে।
তবে, বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর এর সরাসরি প্রভাব এখনই বলা কঠিন। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা আমাদের রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের উপর কিছু প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, এই ধরনের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার।
শেয়ার বাজারের মন্দা একটি জটিল বিষয়, তবে এর কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে অবগত থাকলে, বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস