মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যা অনেকের মতে ‘ট্রাম্প স্ল্যাম্প’-এর লক্ষণ। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি এবং মন্তব্য।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম অফিস (National Travel and Tourism Office) -এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ১১.৬ শতাংশ কমেছে।

যদিও এই হিসাবের মধ্যে কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তবে মেক্সিকো থেকে আকাশপথে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

পর্যটন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ট্যুরিজম ইকোনমিকস (Tourism Economics) -এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রায় ৭.১ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৩ শতাংশ কম।

সংস্থাটি আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, এই বছর আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু এখন তারা তাদের পূর্বাভাস সংশোধন করে ৯.৪ শতাংশ পতনের আশঙ্কা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে অনেক দেশের মানুষ এখন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এর মধ্যে বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি, বিভিন্ন দেশের প্রতি বিরূপ মন্তব্য এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মতো বিষয়গুলো অন্যতম।

উদাহরণস্বরূপ, সুইডেন থেকে আসা কয়েকজন পর্যটকের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করার কথা জানা গেছে। তারা ট্রাম্পের একটি মন্তব্যের কারণে তাদের ভ্রমণ বাতিল করেন এবং ইউরোপে ঘুরতে যান।

কানাডার নাগরিকদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখা যাচ্ছে। দেশটির সরকার মনে করে, ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য তাদের দেশের জন্য অপমানজনক ছিল।

এর ফলস্বরূপ, কানাডার অনেক নাগরিক এখন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফ্লাইট সেন্টার ট্রাভেল গ্রুপ কানাডা (Flight Centre Travel Group Canada) -এর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অবকাশ যাপনের জন্য বুকিং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

চীনের পর্যটকদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চীন থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের ক্ষমতা ছাড়ার পরেই হয়তো এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।

পর্যটন খাতের এই মন্দা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্যুরিজম ইকোনমিকস-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ব্যয় এবার ৯ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমতে পারে।

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিস্থিতি তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ভ্রমণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্কো ইয়ান (Marco Jahn) জানিয়েছেন, গত আট থেকে দশ সপ্তাহে তাদের বুকিং ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে, যা বিভিন্ন দেশের বাজারের উপর নির্ভর করে।

তবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণই নয়, অন্যান্য কিছু বিষয়ও পর্যটকদের সংখ্যা কমার পেছনে দায়ী। জাপানি পর্যটকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে পছন্দের গন্তব্য ছিল, কিন্তু বর্তমানে তারা দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে ভ্রমণে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

এর কারণ হিসেবে মুদ্রা বিনিময় হারের প্রভাবকে অনেকে দায়ী করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা দেশটির অর্থনীতি এবং পর্যটন শিল্পের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস