ভিয়েতনামে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে লেগোর পরিবেশ-বান্ধব কারখানা, লক্ষ্য কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানো।
খেলনা প্রস্তুতকারক বিশ্বখ্যাত ডেনিশ কোম্পানি লেগো, ভিয়েতনামের বিনহ দুং-এ ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক কারখানা স্থাপন করেছে। বুধবার (২ এপ্রিল, ২০২৪) এই কারখানার উদ্বোধন করা হয়।
পরিবেশ সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে, কার্বন নিঃসরণ একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে এই কারখানাটি তৈরি করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির (clean energy) উপর ভিত্তি করে কারখানাটি পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এটি ভিয়েতনামের প্রথম কারখানা, যা এই ধরনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে।
লেগোর এই নতুন কারখানাটি শুধু ভিয়েতনামের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের কাছেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কার্বন নিঃসরণ বন্ধের লক্ষ্যে লেগোর ২০৫০ সালের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।
এর অংশ হিসেবে, ২০৩২ সালের মধ্যে তারা তাদের কার্বন নিঃসরণ ৩৭ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায়। জানা গেছে, খেলার সামগ্রী তৈরির জন্য ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ তৈরির জন্য কোম্পানিটি ইতিমধ্যে ১.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।
ভিয়েতনামের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং দেশটি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার (net-zero emissions) লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। লেগোর এই কারখানা সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারখানায় ১২,৪০০ সোলার প্যানেল (solar panel) এবং শক্তি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা (energy storage system) স্থাপন করা হয়েছে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেগোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নীলস ক্রিশ্চিয়ানসেন জানিয়েছেন, “আমরা চাই আমাদের শিশুরা বেড়ে ওঠার সময় একটি সুন্দর এবং কার্যকরী পৃথিবী খুঁজে পাক।”
লেগোর এই কারখানায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে খেলার সামগ্রী তৈরি করা হবে এবং সেগুলি প্যাক করা হবে।
কারখানায় কয়েক হাজার দক্ষ কর্মী কাজ করবেন, যাদের ইতিমধ্যে চীনের একটি লেগো কারখানায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ভিয়েতনামের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো উৎপাদন শিল্প, যা দেশের জিডিপির (GDP) প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এই শিল্পে ব্যবহৃত হয় দেশের মোট বিদ্যুতের প্রায় অর্ধেক।
২০৪০ সালের মধ্যে ভিয়েতনাম কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। এমন পরিস্থিতিতে, লেগোর এই কারখানা টেকসই (sustainable) উৎপাদন ব্যবস্থার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এই কারখানার জন্য সরকার ‘সরাসরি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি’ (Direct Power Purchase Agreement – DPPA) নামক একটি নতুন নিয়ম তৈরি করেছে, যা বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে সরাসরি নবায়নযোগ্য জ্বালানি কেনার সুযোগ করে দেবে।
লেগো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারখানার অবশিষ্ট ১০-২০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য তারা অন্যান্য পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সঙ্গে চুক্তি করবে। এছাড়াও, কোম্পানিটি অস্ট্রেলিয়া এবং অন্যান্য এশীয় বাজারে তাদের পণ্য সরবরাহ করার জন্য ভিয়েতনামের ডং নাই প্রদেশে একটি বিতরণ কেন্দ্রও খুলবে।
লেগোর এই কারখানাটি ৬২টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। কারখানার ভবনগুলো উচ্চ শক্তি-সাশ্রয়ী মানদণ্ড মেনে তৈরি করা হয়েছে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য, এখানে ৫০,০০০ গাছ লাগানো হয়েছে, যা কারখানা তৈরির জন্য কাটা গাছের দ্বিগুণ। এছাড়াও, তারা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পরিবর্তে প্যাকেজিংয়ের জন্য কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করছে।
লেগোর প্রতিষ্ঠাতা ওলে ক্রিক ক্রিশ্চিয়ানসেন ১৯৫৮ সালে প্লাস্টিকের খেলনা তৈরির ধারণা নিয়ে আসেন। বর্তমানে, লেগো তাদের প্লাস্টিক সামগ্রী আরও পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে তৈরির চেষ্টা করছে।
লেগোর তৈরি করা খেলার সামগ্রীগুলি অনেক বছর ধরে ব্যবহার করা যায়। ভবিষ্যতে, তারা চেষ্টা করছে নবায়নযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করে খেলনা তৈরির।
বর্তমানে, লেগোর খেলনা তৈরির জন্য ব্যবহৃত এক-তৃতীয়াংশ উপকরণ আসে নবায়নযোগ্য এবং পুনর্ব্যবহৃত উৎস থেকে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস