মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের স্কুলগুলোতে (DoDEA) পাঠ্যক্রম ও পরিবেশে পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা এই স্কুলগুলোতে সম্প্রতি নেওয়া কিছু নীতির কারণে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যার মূলে রয়েছে ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি, এবং ইনক্লুশন (DEI) বিষয়ক কিছু পদক্ষেপের বিরোধিতা।
এই পরিবর্তনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্কুলে বিক্ষোভ করেছে।
ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি, এবং ইনক্লুশন (বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি) বর্তমানে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এর মূল লক্ষ্য হল সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ নিশ্চিত করে।
তবে, সম্প্রতি পেন্টাগনের নেওয়া কিছু নীতির কারণে DoDEA স্কুলগুলোতে এই নীতির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশ, যেখানে DEI সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে, অনেক স্কুলে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করা হচ্ছে, কিছু বিশেষ ক্লাস বাতিল করা হয়েছে এবং পাঠাগারের বইয়ের তালিকাও সংকুচিত করা হচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, অনেক শিক্ষক এখন ক্লাসে তাদের পছন্দের নাম ও লিঙ্গ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সম্বোধন করতে পারছেন না, বরং তাদের জন্মগত নাম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জার্মানিতে বসবাসকারী এক DoDEA অভিভাবক সিএনএনকে জানান, “এই স্কুলগুলোতে পড়াশোনা করা শিশুদের ওপর প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে, উপর থেকে যে নির্দেশ আসে, তা অবশ্যই পালন করতে হয়।
এটি কোনো রাজ্যের বিষয় নয়— সরাসরি স্কুলের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।
এই নীতির প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার DoDEA-র অধীনে থাকা বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এই বিক্ষোভে ইংল্যান্ড, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং জাপানের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
বিক্ষোভকারীরা তাদের বক্তব্যে জানায়, তারা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চায় যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং তাদের কোনো পরিচয় নিয়ে বৈষম্য করা হবে না।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মতে, DEI নীতিমালার কারণে তাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে, যা তাদের সহপাঠীদের থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্কুলে AP (অ্যাডভান্সড প্লেসমেন্ট) সাইকোলজি ক্লাসটি চালু রাখার পক্ষে মত দেন।
DoDEA-র মুখপাত্র উইল গ্রিফিন সিএনএনকে জানান, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয় এবং তারা এমন একটি পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে সকল শিক্ষার্থী শিখতে ও বেড়ে উঠতে পারে।
তিনি আরও জানান, AP সাইকোলজি ক্লাস পুনরায় চালু করার জন্য কলেজ বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
তবে, অনেক অভিভাবক মনে করেন, এই পরিবর্তনগুলো তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করবে।
তারা উদ্বিগ্ন যে, এই ধরনের নীতির কারণে তাদের সন্তানেরা ভালো কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে পারে।
স্কুলগুলোতে এই পরিবর্তনের ফলে অনেক শিক্ষকও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন কিছু বিধিনিষেধ তাদের কাজকে কঠিন করে তুলেছে।
শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ এবং অভিভাবকদের উদ্বেগের মধ্যে DoDEA কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
তবে, এই বিতর্কের জেরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: CNN