শিরোনাম: আমেরিকার ‘চিকেন ট্যাক্স’: বাণিজ্য নীতির সুদূরপ্রসারী প্রভাব
আমেরিকার ‘চিকেন ট্যাক্স’-এর গল্প, যা ১৯৬৩ সালে শুরু হয়েছিল, বাণিজ্য নীতির জটিলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এই শুল্ক মূলত হালকা ট্রাকের উপর আরোপ করা হয়েছিল, এবং এর মূল কারণ ছিল ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে আমেরিকান মুরগির উপর শুল্ক আরোপ করা। এই পদক্ষেপের ফলস্বরূপ, কয়েক দশক ধরে এটি কিভাবে বাজারের গতিপথ পরিবর্তন করেছে, তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।
শুরুর দিকে, এই শুল্কের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউরোপীয় প্রস্তুতকারকদের, বিশেষ করে জার্মান গাড়ি নির্মাতা ফক্সওয়াগনকে (Volkswagen) আঘাত করা।
এর ফলস্বরূপ, আমেরিকান উৎপাদকরা বিদেশি প্রতিযোগিতার চাপ থেকে মুক্তি পায় এবং তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে সক্ষম হয়। এই নীতির কারণে আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য গাড়ির পছন্দ সীমিত হয়ে পরে, সেইসাথে দামও বাড়ে।
এই শুল্কের কারণে বিদেশি গাড়ি নির্মাতারাও বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে বাধ্য হয়।
কেউ কেউ শুল্ক ফাঁকি দিতে ট্রাকের বডি ছাড়াই যন্ত্রাংশ পাঠাত, আবার কেউবা যাত্রী গাড়ির আদলে পরিবর্তন করে শুল্ক বাঁচানোর চেষ্টা করে।
উদাহরণস্বরূপ, একসময় ফোর্ড (Ford) তাদের ইউরোপে তৈরি হওয়া Transit Connect ভ্যানগুলোকে অতিরিক্ত সিট যুক্ত করে পাঠাত, যা কাস্টমসের পরে সরিয়ে ফেলা হতো।
পরে এই অভিযোগে তাদের বিশাল অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়।
তবে, নব্বইয়ের দশকে নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (NAFTA) স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
এর ফলে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্য সহজ হয়, এবং অনেক গাড়ি নির্মাতা এই দেশগুলোতে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করে।
এর ফলে, আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করা বিদেশি গাড়ির জন্য শুল্ক কিছুটা হলেও এড়ানো সম্ভব হয়।
এই ‘চিকেন ট্যাক্স’-এর ফলস্বরূপ, বিদেশি গাড়ি নির্মাতারা আমেরিকান বাজারে ছোট ও জ্বালানি সাশ্রয়ী গাড়ির দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
১৯৭০-এর দশকে যখন গ্যাসের দাম বাড়ে, তখন এই ধরনের গাড়ির চাহিদা বাড়ে, এবং বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো তাদের ব্যবসা বাড়াতে সক্ষম হয়।
যদিও এই ট্যাক্স সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের কারণ ছিল না, তবে এটি তাদের জন্য বাজারে টিকে থাকার একটি কৌশল তৈরি করে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একবার কোনো শুল্ক চালু হলে, তা সহজে সরানো যায় না।
কারণ, এর সঙ্গে বিভিন্ন স্বার্থ জড়িত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একসময় টেলিভিশন এবং ভিডিও প্লেয়ারের উপর শুল্ক ছিল, যা এখনো বিদ্যমান।
বাণিজ্য নীতি কিভাবে একটি দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, ‘চিকেন ট্যাক্স’ তারই প্রমাণ।
এই ধরনের নীতি ভোক্তাদের জন্য উচ্চ মূল্য এবং সীমিত পছন্দের কারণ হতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতির এই জটিল খেলার প্রেক্ষাপটে, বাণিজ্য নীতি প্রণয়নের সময় এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন