ইউরোপীয় ওয়াইনগুলোতে ‘চিরস্থায়ী রাসায়নিক’ পদার্থের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং দূষণের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সম্পর্কে নতুন করে সতর্কবার্তা দিচ্ছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ‘পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইউরোপ’ (Pesticide Action Network Europe)। তারা বিভিন্ন সময়ের ৪9 বোতল ওয়াইন পরীক্ষা করে ট্রাইফ্লুরোএসিটিক অ্যাসিড (TFA) এর উপস্থিতি যাচাই করেছেন। টিএফএ হলো ‘পিএফএএস’ (PFAS) নামক দীর্ঘস্থায়ী রাসায়নিকের একটি ভাঙন উপাদান, যা সম্ভাব্য প্রজনন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের আগের উৎপাদিত ওয়াইনগুলোতে টিএফএ’র কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে, ২০১০ সালের পর থেকে উৎপাদিত ওয়াইনগুলোতে এর মাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৮ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে টিএফএ’র ঘনত্ব ছিল প্রতি লিটারে ১৩ মাইক্রোগ্রাম থেকে ২১ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত, যা পরবর্তী সময়ে দ্রুত বেড়ে সাম্প্রতিক ওয়াইনগুলোতে গড়ে ১২১ মাইক্রোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা বলছেন, জৈব এবং প্রচলিত উভয় ধরনের ওয়াইনেই টিএফএ দূষণ বেড়েছে, তবে জৈব ওয়াইনগুলোতে এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইউরোপের তরফে সালোম রোয়েনেল বলেন, “যেসব ওয়াইনে টিএফএ’র ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ছিল, সেগুলোতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশও বেশি পাওয়া গেছে।”
পিএফএএস হলো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা বিভিন্ন ভোক্তা পণ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, কিছু পিএফএএস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। জার্মান রাসায়নিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতিমধ্যেই টিএফএকে প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য বিষাক্ত হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিএফএ’র স্থিতিশীলতা এবং এর ঘনত্বের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বিবেচনা করলে, এটি পরিবেশের উপর একটি মারাত্মক হুমকি তৈরি করতে পারে।
নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক হান্স পিটার আর্প, যিনি এই গবেষণায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, তিনি বলেন, “এই ফলাফলগুলো হতাশাজনক হলেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। টিএফএ’র ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণগুলো বিজ্ঞানীদের জানা। এর প্রধান উৎস হলো ফ্লোরিনেটেড রেফ্রিজারেন্ট (F-gases) এবং পিএফএএস কীটনাশক।
১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রোটোকলের কারণে যখন ওজন-ক্ষয়কারী পদার্থ (যেমন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন) নিষিদ্ধ করা হয়, তখন F-gases-এর ব্যবহার বাড়ে। আর ১৯৯০-এর দশকে ইউরোপে পিএফএএস কীটনাশকের ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে।”
গবেষকরা মনে করেন, এখনই যদি পিএফএএস কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করা হয়, তবুও আগামী বছরগুলোতে জলসহ বিভিন্ন স্থানে টিএফএ’র ঘনত্ব আরও বাড়তে পারে। কারণ, মাটিতে জমা হওয়া কীটনাশকগুলো সময়ের সঙ্গে ভেঙে টিএফএ নিঃসরণ করতে থাকবে।
এই গবেষণার ফল বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যদিও এই গবেষণাটি ইউরোপীয় ওয়াইনকে কেন্দ্র করে, তবে এর মাধ্যমে বিশ্বে রাসায়নিক দূষণের বিস্তার এবং খাদ্য ও জলের সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টি বিশেষভাবে সামনে আসে।
তথ্যসূত্র: The Guardian