বিখ্যাত লেখক সালমান রুশদির উপর হামলাকারীকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। ২০২২ সালে নিউইয়র্কের একটি সাহিত্য উৎসবে রুশদির ওপর ছুরি দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। হামলাকারীকে এবার তার এই জঘন্য অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে চলেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী হাদি মাতারকে সম্ভবত ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। দ্বিতীয়-ডিগ্রি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার চার মাস পর এই রায় ঘোষণা করা হবে। জানা গেছে, চautাকুয়া কাউন্টি কোর্টে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। যে স্থানে হামলাটি হয়েছিল, আদালত তার কাছাকাছি অবস্থিত।
২০২২ সালের ১২ই আগস্ট, লেখক সালমান রুশদি যখন একটি সাহিত্য সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন, সেই সময় হাদি মাতার তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ছুরি দিয়ে একাধিকবার আঘাত করেন। হামলায় রুশদির একটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং লিভারে গুরুতর জখম হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অস্ত্রোপচার করতে হয়।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে রুশদি সেই দিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, মঞ্চে বসে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন হঠাৎ করেই এক ব্যক্তি তার দিকে তেড়ে আসে এবং এলোপাথাড়িভাবে তাকে কোপাতে শুরু করে। রুশদি বলেন, তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি কি হচ্ছে, পরে যখন দেখেন তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, তখন তিনি বুঝতে পারেন তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
হামলার পর গ্রেপ্তার হওয়া হাদি মাতার জানান, তিনি রুশদিকে পছন্দ করেন না। তার মতে, রুশদি ইসলাম ধর্মকে অপমান করেছেন। নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি তাকে ( রুশদিকে) একদম পছন্দ করি না। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি ইসলামের উপর আঘাত করেছেন, তাদের বিশ্বাসের উপর আঘাত করেছেন।
আদালতে হাদি মাতারের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে, রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে তার মক্কেলের হত্যার উদ্দেশ্য ছিল। তাই তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা উচিত হয়নি। তবে আদালত তা গ্রাহ্য করেনি এবং তাকে দোষী সাব্যস্ত করে।
এই ঘটনার পর, রুশদি তার জীবন নিয়ে নতুন করে লেখা শুরু করেন। তিনি ‘নাইফ: মেডিটেশনস আফটার অ্যান অ্যাটেম্পটেড মার্ডার’ নামে একটি বই লিখেছেন, যেখানে এই হামলার বর্ণনা রয়েছে। এছাড়াও, এই বছর তিনি ‘দ্য ইলেভেন্থ আওয়ার’ নামে একটি নতুন বই প্রকাশ করতে চলেছেন।
সালমান রুশদির উপর এই হামলাটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত তার বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ (The Satanic Verses) -এর প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত হয়েছিল। ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি এই বইটিকে ধর্ম অবমাননাকর হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন।
হাদি মাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগেও একটি পৃথক মামলা চলছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান