যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি: অস্পষ্টতা ও বিশ্ব অর্থনীতির উপর প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি প্রায়শই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, বিশেষ করে চীন-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলো।
এই নীতিগুলোর মূল উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে অনেক সময় ধোঁয়াশা দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে।
বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে বিভিন্ন কথা বলা হয়েছে। কখনো শিল্পখাতকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, আবার কখনো বাণিজ্যে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু এই নীতিগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট একটি যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই অস্পষ্টতার কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, চীনের ওপর ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ১৪৫ শতাংশ শুল্কের কথা বলা যায়। এই শুল্কের কারণে আইফোনসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
যদিও পরবর্তীতে কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্ক শিথিল করা হয়েছে, তবে এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুকের হস্তক্ষেপে কিছু শুল্ক মওকুফ করা হয়, যা অন্যান্য ব্যবসায়ীদেরও নজরে আসে।
এরপর অনেকেই শুল্ক থেকে বাঁচতে তদবির শুরু করেন। বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা শুল্কের বিষয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন।
ওয়ালমার্ট, টার্গেট, লোয়েজ এবং হোম ডিপোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শুল্কের বিষয়ে নীতিনির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সুসংহত নয়।
এর ফলে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাঁদের দাবি জানাতে সমস্যা অনুভব করছেন। এই ধরনের নীতি গ্রহণের ফলে কিছু সমস্যা দেখা যায়।
প্রথমত, এর ফলে দুর্নীতির আশঙ্কা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, শুল্ক আরোপের পেছনে ট্রাম্পের দেওয়া কিছু বক্তব্য, যেমন—শিল্পখাতকে পুনরুজ্জীবিত করার ধারণা—প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
তৃতীয়ত, এই নীতির কোনো সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দেখা যায় না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ ব্যবসার জন্য ভালো নয়। গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমনের মতে, এই মুহূর্তে অনিশ্চয়তা অনেক বেশি, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
এর ফলে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, বিশ্ব বাণিজ্য এবং বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের কারণে আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পোশাক, চামড়া, পাটসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য রয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আসলে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন