মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাম রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জনমনে টীকা (vaccine) সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে। একটি নতুন জরিপে দেখা গেছে, দেশটির অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হাম রোগ এবং এর প্রতিষেধক টীকা নিয়ে ভুল তথ্য শুনেছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই সেই বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত।
পশ্চিম টেক্সাসে (West Texas) এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রায় ৯০০ জনের বেশি মানুষ হামে আক্রান্ত হয়েছে।
এদের অধিকাংশই টীকা গ্রহণ করেননি।
KFF নামক একটি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ শুনেছেন যে MMR (Measles, Mumps, Rubella – হাম, মাম্পস, রুবেলা) টীকা অটিজম (autism) রোগের কারণ।
এছাড়া, এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন হামের টীকা এই রোগের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। এমনকি, ভিটামিন এ (Vitamin A) হাম প্রতিরোধ করতে পারে—এমন ভুল ধারণাও অনেকের মধ্যে বিদ্যমান।
মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র (Robert F. Kennedy Jr.) এই সম্পর্কিত কিছু ভুল তথ্য প্রচার করেছেন। যদিও বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, টীকা এবং অটিজমের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি অবশ্য সম্প্রতি টীকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, তবে এটিকে ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ মনে করেন, MMR টীকা সম্ভবত অটিজমের কারণ। এছাড়া, এক-চতুর্থাংশ মনে করেন, ভিটামিন এ হাম প্রতিরোধ করতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষ মনে করেন, হামের টীকা নেওয়া, হামে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।
এই ভুল ধারণা রিপাবলিকান এবং হিস্পানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভুল ধারণাগুলোর কারণে অনেক বাবা-মা তাদের শিশুদের টীকা দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন অথবা দেরি করছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী অভিভাবকদের মধ্যে যারা অন্তত একটি ভুল ধারণাকে সমর্থন করেন, তাদের সন্তানদের টীকা দেওয়া হয়নি অথবা তারা টীকা দিতে দেরি করেছেন, এমনটা দেখা গেছে।
যদিও এই রোগটি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি দেখা যাচ্ছে, তবে বাংলাদেশেও টিকাদান কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম।
আমাদের দেশে শিশুদের রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাকরণের মাধ্যমে এই ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং অটিজম বিষয়ক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে, টীকা ও অটিজমের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।
তাদের মতে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বার্তাগুলোতে বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের প্রতিফলন ঘটাতে হবে এবং সমাজের সকলকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN