আফ্রিকার এক অদ্ভুত প্রাণী: আর্ডভার্ক।
পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে যাদের সম্পর্কে আমরা হয়তো খুব বেশি জানি না। তাদের মধ্যে একটি হলো আর্ডভার্ক।
আর্ডভার্ক নামটি এসেছে আফ্রিকান ভাষা থেকে, যার অর্থ “মাটির শূকর”। তবে এরা দেখতে শূকরের মতো হলেও, এদের সঙ্গে আরও অনেক প্রাণীর মিল রয়েছে। চলুন, আজ এই অদ্ভুত প্রাণী আর্ডভার্ক সম্পর্কে কিছু মজাদার তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আর্ডভার্ক দেখতে কেমন?
আর্ডভার্ক-এর শরীর ধূসর রঙের, গড়নটা বেশ গোলগাল। এদের লম্বা শুঁড় এবং শুয়োরের মতো মুখ রয়েছে।
এরা আকারে বেশ বড় হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক আর্ডভার্কের ওজন প্রায় ৬৫ কিলোগ্রাম (১৪৩ পাউন্ড) পর্যন্ত হতে পারে, যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওজনের কাছাকাছি।
এদের দৈর্ঘ্য ২.২ মিটার (প্রায় ৭.২ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে।
আর্ডভার্ক-এর বাসস্থান ও খাদ্যাভ্যাস।
আর্ডভার্ক মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করে।
এরা নিশাচর প্রাণী, অর্থাৎ দিনের বেলা এরা ঘুমায় এবং রাতে খাবারের সন্ধানে বের হয়।
আর্ডভার্ক-এর প্রধান খাদ্য হলো পিঁপড়া ও উইপোকা। তাদের লম্বা, আঠালো জিভ (প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার বা ১২ ইঞ্চি) থাকে যা দিয়ে তারা খুব সহজেই পোকামাকড় ধরে খেতে পারে।
তারা শক্তিশালী নখর দিয়ে মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে এবং সেখানে বাস করে।
আর্ডভার্ক-এর জীবনযাত্রা।
আর্ডভার্ক-রা বন্য পরিবেশে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর বাঁচে, তবে বন্দী অবস্থায় তারা ২৪ বছর বা তার বেশি দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
সম্প্রতি, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ চিড়িয়াখানায় পিয়েটা নামের একটি আর্ডভার্ক ৩৩ বছর বয়সে পৌঁছেছিল, যা বিশ্বে রেকর্ড।
আর্ডভার্ক-এর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব।
আফ্রিকার অনেক সংস্কৃতিতে আর্ডভার্ক-এর বিশেষ স্থান রয়েছে।
কোনো কোনো উপজাতি মনে করে, আর্ডভার্ক-এর চামড়া ও গাছের শিকড় দিয়ে তৈরি তাবিজ ধারণ করলে নাকি রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হওয়া যায়।
আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে, আর্ডভার্ক-এর তাবিজ সৌভাগ্য নিয়ে আসে।
আর্ডভার্ক-এর সংরক্ষণ।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) আর্ডভার্ক-কে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করে না।
তবে, মানুষের দ্বারা আর্ডভার্ক শিকার এবং তাদের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এদের জীবন হুমকির মুখে।
তাই, এদের সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আর্ডভার্ক-এর সিনেমা ও সাহিত্যে উপস্থিতি।
আর্ডভার্ক-রা বিভিন্ন সিনেমা ও টিভি শো-তে দেখা যায়।
যেমন, “দ্য লায়ন কিং” (The Lion King), “আইস এজ: ডন অফ দ্য ডাইনোসরস” (Ice Age: Dawn of the Dinosaurs) -এর মতো সিনেমাগুলোতে এদের দেখা গেছে।
তাছাড়া, “আর্থার” (Arthur) নামক একটি জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজের প্রধান চরিত্রটিও একটি আর্ডভার্ক।
উপসংহার।
আর্ডভার্ক একটি অসাধারণ প্রাণী।
এদের অদ্ভুত চেহারা, খাদ্যাভ্যাস এবং আফ্রিকার সংস্কৃতিতে এদের গুরুত্ব—সবকিছুই একে বিশেষভাবে পরিচিত করে তোলে।
এদের সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব, যাতে এই সুন্দর প্রাণীগুলো আরও বহু বছর ধরে পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার