যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে সম্ভবত বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে বাণিজ্য চুক্তি করার পরিবর্তে এখন আঞ্চলিক শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে।
এর ফলে, একটি অঞ্চলের দেশগুলো, তাদের নিজস্ব বাণিজ্য নীতির ভিন্নতা সত্ত্বেও, একই ধরনের শুল্কের মুখোমুখি হতে পারে। এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ব বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কেমন হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে।
শুরুতে, ট্রাম্প প্রশাসন ‘প্রত্যক্ষ’ শুল্ক আরোপের কথা বলেছিল। অর্থাৎ, যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি করতে রাজি নয়, তাদের ওপর এই শুল্ক বসানো হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পৃথকভাবে চুক্তি করা সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমতাবস্থায়, প্রশাসন এখন আঞ্চলিক শুল্কের দিকে ঝুঁকছে। এর মূল কারণ হতে পারে, বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়া।
আঞ্চলিক শুল্কের ধারণাটি হলো, একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের দেশগুলোকে একত্রিত করে তাদের জন্য অভিন্ন শুল্ক হার নির্ধারণ করা। উদাহরণস্বরূপ, মধ্য আমেরিকার দেশগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট শুল্ক হার এবং আফ্রিকার কোনো অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য আরেকটি হার নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে, এই ধরনের পদক্ষেপের কিছু ঝুঁকিও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে অনেক দেশের জন্য শুল্কের বোঝা বাড়তে পারে, বিশেষ করে চীন-এর কাছাকাছি অবস্থিত দেশগুলোর ক্ষেত্রে। কারণ, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ সংঘাতপূর্ণ। যদি কোনো দেশ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে জড়িত থাকে, তবে তাদের ওপর শুল্কের হার বেশি হতে পারে।
আঞ্চলিক শুল্ক পদ্ধতি চালু হলে, দেশগুলোর মধ্যে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কারণ, দেশগুলো তখন এককভাবে নয়, বরং জোটবদ্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization – WTO) নিয়মানুযায়ী, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ‘মোস্ট-ফেভারড নেশন’ বা সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের শুল্ক হার প্রযোজ্য হয়, যা আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ভিত্তি তৈরি করে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে প্রভাব পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রেও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক এবং বাণিজ্য বিশ্লেষকদের জন্য এই পরিবর্তনগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের বাণিজ্য কৌশলকে নতুনভাবে সাজানো প্রয়োজন হতে পারে, যাতে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন