ইংল্যান্ডের সবুজ প্রান্তরে এক অসাধারণ পদযাত্রা: দুই সপ্তাহে ৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি
যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের একটি গ্রাম সেইন্ট বীজ থেকে শুরু করে পূর্ব উপকূলের রবিন হুড’স বে পর্যন্ত বিস্তৃত, প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পথ— নাম তার ‘কোস্ট টু কোস্ট ওয়াক’। সম্প্রতি অবসর জীবন শুরু করা এক দম্পতি, তাঁদের ভ্রমণের নেশা থেকেই যেন এই দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ব্রিটেনের তিনটি জাতীয় উদ্যান— লেক ডিস্ট্রিক্ট, ইয়র্কশায়ার ডেলস এবং নর্থ ইয়র্ক মুরস-এর বুক চিরে যাওয়া এই পথ তাঁদের দু’জনের জীবনের এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে।
এই পথ পরিক্রমা ছিল প্রকৃতির এক অপরূপ লীলার সাক্ষী। সবুজ ঘাস, পাথুরে সৈকত, হালকা বাদামী পাহাড়— যাত্রা শুরুর প্রথম দিনেই তাঁরা যেন প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপের সাক্ষী হলেন। আইরিশ সাগরের ঢেউয়ের শব্দ আর সমুদ্রের বাতাস তাঁদের মন ভরিয়ে তুলেছিল।
তাঁরা একটি ঐতিহ্য অনুসরণ করে সৈকত থেকে একটি নুড়ি পাথর তুলে নিলেন, যা পুরো পথ পাড়ি দিয়ে নর্থ সাগরের তীরে ফেলতে চেয়েছিলেন।
লেক ডিস্ট্রিক্ট জাতীয় উদ্যানে পৌঁছে তাঁরা যেন এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করলেন। সবুজ বনভূমি, পাহাড় আর হ্রদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তাঁদের চোখে শান্তি এনে দেয়। এখানকার পথ কখনো ছিল মাটির, কখনো পাথরের, আবার কখনো লেকের ধার ঘেঁষে চলা পথ।
প্রকৃতির এই রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁরা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছিলেন। লেখিকা বিয়াট্রিক্স পটারের স্মৃতি বিজড়িত অঞ্চলে হেঁটে যেন তাঁরা অন্য এক জগৎ আবিষ্কার করেন।
ইয়র্কশায়ার ডেলস-এর সবুজ ঘাস আর ঢেউ খেলানো পাহাড় পথের মাঝে তাঁদের চোখে পরে সবুজের আচ্ছাদনে মোড়া উপত্যকা। অতীতের অনেক সিনেমার দৃশ্যের মতোই, এখানকার প্রকৃতি তাঁদের মুগ্ধ করে। এখানকার স্থানীয় গ্রামগুলি যেন এক একটি জীবন্ত পোস্টকার্ড।
নর্থ ইয়র্ক মুরস-এর পথ ছিল কিছুটা ভিন্ন। এখানকার লতাপাতা ধূসর-সবুজ, মরিচা-বাদামী এবং বেগুনী রঙের মিশ্রণে তৈরি হয়েছিল এক মনোরম দৃশ্য। এই পথের ধারে মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রামগুলোতে তাঁরা বিশ্রাম নিয়েছিলেন, যেখানে স্থানীয় ইন এবং গেস্ট হাউজগুলোতে অন্যান্য ভ্রমণকারীদের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়।
এখানকার পাবগুলোতে বসে তাঁরা স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন।
ভ্রমণের শেষ প্রান্তে, যখন তাঁরা উত্তর সাগর দেখতে পান, তখন তাঁদের আনন্দের সীমা ছিল না। তাঁদের দু’জনের চোখেমুখে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। পকেটে রাখা সেই নুড়ি পাথরটি হাতে নিয়ে তাঁরা যেন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলেন।
এই পথ পরিক্রমা শুধু একটি ভ্রমণ ছিল না, বরং ছিল প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ব্রিটেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি, স্থানীয় সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়াটা তাঁদের কাছে ছিল অন্যরকম পাওয়া।
বাংলাদেশের ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য এই ধরনের অভিজ্ঞতা সত্যিই অনুসরণযোগ্য।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল অ্যান্ড লেজার