জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme – WFP) তাদের দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের কার্যালয়টি বন্ধ করে দিচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে তারা তাদের কাঠামোকে আরও সুসংহত করার জন্য একটি বহু-বর্ষীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে, সাহায্য বাবদ অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বেড়ে যাওয়ায়, তারা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। ডব্লিউএফপি তাদের দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার কার্যক্রম একত্র করে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে একটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করবে। ফলে, জোহানেসবার্গে অবস্থিত দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের কার্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাবে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খাদ্য কর্মসূচিগুলি অব্যাহত থাকবে। তারা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে সবসময় আছে এবং তাদের খাদ্য চাহিদা পূরণে ডব্লিউএফপি তাদের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও দক্ষ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ডব্লিউএফপি জানায়নি যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তারা ঠিক কত পরিমাণ অর্থ হারাতে যাচ্ছে। তবে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র তাদের মোট বার্ষিক বাজেটের প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭,৭০০ কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে। জার্মানির দেওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল এর চেয়ে চারগুণের বেশি।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় বৈদেশিক সাহায্যের ৯০ শতাংশ চুক্তি বাতিল করছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মানবিক প্রকল্পগুলোতে প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬,৫৪,০০০ কোটি টাকা) খরচ বন্ধ হয়ে যাবে।
ডব্লিউএফপি-র তথ্য অনুযায়ী, এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন দক্ষিণ আফ্রিকা গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা মোকাবেলা করছে। এতে শস্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে এবং ২ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়েছে। এমনকি, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য কমানো শুরু করার আগেই ডব্লিউএফপি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ১৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,৫৯৭ কোটি টাকা) অনুদানের আবেদন জানিয়েছিল।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বর্তমানে বিশ্বের ১২০টি দেশের ১৫ কোটির বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। ২০২০ সালে তারা নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে। ১৯৯২ সাল থেকে সংস্থাটির প্রধান ছিলেন ছয় জন মার্কিন নাগরিক। বর্তমান নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইনও একজন মার্কিন নাগরিক এবং তিনি সাবেক মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কমানোর ফলে জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলোর ওপরও প্রভাব পড়েছে। জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা (International Organization for Migration) জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ৩,০০০ কর্মীর চাকরি কমাতে বাধ্য হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএ (UNFPA) জানিয়েছে, তাদের বেশ কয়েকটি কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অনেকগুলো জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা এখনো তাদের কার্যক্রমের ওপর এই সাহায্য কমানোর প্রভাব মূল্যায়ন করছে। কিছু প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষ ছাড় পাওয়া যেতে পারে কিনা, সে বিষয়েও তারা এখনো নিশ্চিত নয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস