যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে সাবেক রেসলিং নির্বাহী লিন্ডা ম্যাকমোহনকে সিনেটের অনুমোদন
ওয়াশিংটন, [তারিখ]- মার্কিন সিনেট সোমবার সাবেক রেসলিং নির্বাহী লিন্ডা ম্যাকমোহনকে দেশটির শিক্ষা বিভাগের প্রধান হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। এই পদে আসীন হওয়ার মাধ্যমে তিনি এমন একটি বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন, যা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা রয়েছে। খবরটি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।
সিনেটে ম্যাকমোহনের মনোনয়ন অনুমোদনের পক্ষে ৫১টি এবং বিপক্ষে ৪৫টি ভোট পড়ে। ম্যাকমোহন এমন এক সময়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, যখন একদিকে শিক্ষা বিভাগকে গুটিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে, অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার স্কুলগুলোতে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রোগ্রাম বাতিল এবং ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি স্কুলগুলোতে পছন্দসই কর্মসূচি চালুরও আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে শিক্ষা বিভাগটি বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং ম্যাকমোহনকে নাকি তিনি এমনভাবে কাজ করতে বলেছিলেন, যেন এই বিভাগের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়।
৭৬ বছর বয়সী ম্যাকমোহন পেশাগতভাবে এই পদের জন্য বেশ অপরিচিত। তিনি এক বছর কানেকটিকাটের শিক্ষা বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সেক্রেড হার্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে শিক্ষাখাতে তার সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে কম।
ম্যাকমোহনের সমর্থকরা মনে করেন, তিনি একজন দক্ষ নির্বাহী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে পারবেন বলে মনে করেন। অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছেন, এই পদে ম্যাকমোহনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং তার বাজেট কাটছাঁটের কারণে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে পারে।
সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার মনোনয়ন ভোটের আগে বলেন, “আমেরিকানরা সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বাস করে। তারা শিক্ষা বিভাগকে বিলুপ্ত হতে দেখতে চায় না। ট্রাম্প প্রশাসন যদি শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে স্কুলগুলো বিলিয়ন ডলার তহবিল হারাবে।”
নিযুক্তির শুনানিতে ম্যাকমোহন ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। তিনি বলেন, শিক্ষা বিভাগের লক্ষ্য হল “আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করা”, কোনো প্রোগ্রাম বাতিল করা নয়।
তিনি আরও স্বীকার করেন যে, বিভাগ বন্ধ করার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতেই রয়েছে। তিনি দরিদ্র পরিবারের স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য টাইটেল ১ তহবিল, দরিদ্র কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য পেল গ্রান্ট এবং পাবলিক সার্ভিস লোন ফরগিভনেস প্রোগ্রাম (জনসেবামূলক ঋণ মওকুফ) চালু রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু কার্যক্রম সম্ভবত অন্য বিভাগে স্থানান্তর করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেছেন স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ প্রতিবন্ধী অধিকার আইন আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারে।
ম্যাকমোহনের মনোনয়ন শুনানির কয়েক সপ্তাহ আগে, হোয়াইট হাউস এমন একটি নির্বাহী আদেশের কথা বিবেচনা করছিল, যা শিক্ষা সচিবকে বিভাগটিকে আইনগতভাবে যতটা সম্ভব ছোট করার নির্দেশ দেবে এবং একই সঙ্গে কংগ্রেসকে এটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করবে। ম্যাকমোহনের কিছু সহযোগী এই আদেশটি তার অনুমোদনের পর পর্যন্ত স্থগিত রাখার জন্য হোয়াইট হাউসকে চাপ দিয়েছিল, যাতে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া এড়ানো যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে কংগ্রেস কর্তৃক গঠিত শিক্ষা বিভাগের প্রধান কাজ হলো দেশের স্কুল ও কলেজগুলোতে অর্থ বিতরণ করা। এটি প্রতি বছর কে-১২ স্কুলগুলোতে বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করে এবং ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল ছাত্র ঋণ পোর্টফোলিও দেখাশোনা করে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতে, এই বিভাগে এমন সব উদারপন্থী লোকজনের আধিপত্য রয়েছে, যারা আমেরিকার স্কুলগুলোতে তাদের নিজস্ব আদর্শ চাপিয়ে দেয়।
ইতিমধ্যে, স্কুল ও কলেজগুলোতে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রোগ্রামগুলো বাতিল করার চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এমনটা না করলে তাদের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের মধ্যে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। শিক্ষা বিভাগ সম্প্রতি একটি নথিতে তাদের নির্দেশিকা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেছে। যেখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো প্রোগ্রামের নামে “বৈচিত্র্য” বা “সমতা” উল্লেখ করা হয়, তবে শুধু নাম পরিবর্তন করলেই চলবে না। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যদি জাতিগত বৈষম্য করা হয়, তাহলে সেই প্রোগ্রামগুলো বাতিল করতে হবে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প শিক্ষা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার এবং এর ক্ষমতা রাজ্যগুলোর হাতে অর্পণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও শিক্ষাখাতে ফেডারেল সরকারের চেয়ে রাজ্যগুলোর ক্ষমতা অনেক বেশি। পাঠ্যক্রমের ওপর ফেডারেল সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারি বিদ্যালয়গুলোর বাজেটে ফেডারেল সরকারের অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৪ শতাংশ।
ইতিমধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষা বিভাগের অনেক কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা শুরু করেছে।
ট্রাম্পের উপদেষ্টা এলন মাস্কের সরকারি দক্ষতা বিভাগ (Department of Government Efficiency) ডজনখানেক চুক্তি বাতিল করেছে, যেগুলোকে তারা “উগ্র” ও “অপ্রয়োজনীয়” বলে মনে করে। এটি শিক্ষা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটকে (Institute of Education Sciences) অকার্যকর করে দিয়েছে, যারা দেশের শিক্ষাগত অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়াও, প্রশাসন বহু কর্মীকে হয় বরখাস্ত করেছে, না হয় তাদের কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
কিছু ক্ষেত্রে, ফেডারেল আইন অনুসারে যে কাজগুলো করার কথা ছিল, সেই কাজগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুনানিতে ম্যাকমোহন বলেছিলেন, কংগ্রেসের নির্দেশিত অর্থ বিভাগ খরচ করবে এবং তিনি ডোগের (DOGE) কাটছাঁটকে নিছক নিরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ম্যাকমোহন দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট (WWE) ত্যাগ করে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এবং দুবার মার্কিন সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় কয়েক মিলিয়ন ডলার দান করেছেন এবং তার প্রথম মেয়াদে স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস