যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, যেখানে তিনি তার প্রশাসনের প্রথম কয়েক সপ্তাহের কার্যক্রম তুলে ধরবেন। এই ভাষণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নীতি নিয়ে কথা বলবেন তিনি। মঙ্গলবার এই ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য তুলে ধরবেন ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভাষণে ট্রাম্প ‘আমেরিকান স্বপ্নের পুনর্জন্ম’-এর ওপর গুরুত্ব দেবেন। ক্ষমতায় আসার পর তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরবেন তিনি। একইসঙ্গে অভিবাসন নীতি কঠোর করতে কংগ্রেসের কাছে আরও বেশি অর্থ চাইবেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার জানিয়েছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ, যেখানে তিনি তার প্রশাসনের নজিরবিহীন সাফল্যগুলো তুলে ধরবেন।”
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের এই ভাষণের বিরোধিতা না করে বরং তার নীতির প্রভাবগুলো তুলে ধরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা বিভিন্ন ফেডারেল কর্মী, যাদের চাকরি চলে গেছে, তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এদের মধ্যে অ্যারিজোনার একজন প্রতিবন্ধী ভেটেরান, মেরিল্যান্ডের একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বন বিভাগের একজন কর্মচারীও রয়েছেন। এছাড়া, মেডিকেডসহ অন্যান্য সরকারি কর্মসূচিতে বাজেট কাটছাঁটের শিকার হওয়া ব্যক্তিদেরও তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমেরিকান পরিবার এবং তাদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোর ওপর গুরুত্ব না দিয়ে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মাসে বিলিয়নেয়ারদের জন্য ট্যাক্স কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছেন, যার ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ।”
ভাষণে ট্রাম্প ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবগুলো তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। তিনি সম্প্রতি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি দুর্বল যুদ্ধবিরতি প্রসারিত করার আলোচনাও থমকে গেছে। ট্রাম্প গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তরের প্রস্তাব করেছেন, যা এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।
ভাষণের আগে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা মাদক পাচার রোধে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ট্রাম্পের এই ভাষণ তার আগের মেয়াদের শেষ ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে, সিনেটে অভিশংসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই তিনি এই ভাষণ দিয়েছিলেন, যখন কোভিড-১৯ মহামারি ততটা বিস্তার লাভ করেনি। তবে এবার যেহেতু তিনি নতুন মেয়াদের প্রথম বছরে রয়েছেন, তাই এটিকে ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে না।
ট্রাম্প তার ভাষণে সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে দেশের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর জোর দেবেন। এর পাশাপাশি, তিনি দেশজুড়ে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (ডিইআই) প্রচেষ্টা নির্মূল করতে এবং রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভাষকক্ষে উপস্থিত থাকবেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। সোমবার তিনি তার স্বামীর ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবার কোনো অনুষ্ঠানে একাই অংশ নিয়েছিলেন। তিনি প্রতিশোধমূলক পর্নোগ্রাফি বন্ধে একটি বিল পাসের জন্য সমর্থন জুগিয়েছেন। তার সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ১৫ বছর বয়সী এলিস্টন বেরি, যিনি গভীর জাল ছবি (ডিপফেইক) পাঠিয়ে বন্ধুদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও তাদের পছন্দের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আইওয়ার রিপাবলিকান সিনেটর জোনি আর্নস্ট তার অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন স্কট রুটের বাবা, যিনি ২০১৬ সালে তার মেয়ের স্নাতক শেষ হওয়ার রাতে একজন অবৈধ অভিবাসীর গাড়ির ধাক্কায় মেয়ের মৃত্যুর শিকার হয়েছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের বাইরেও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস