গ্রিনল্যান্ড: ডেনমার্ক নয়, আমেরিকারও অধীন হতে চায় না তারা
আর্টিক অঞ্চলের একটি বিশাল দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। তুষারে ঢাকা এই দ্বীপটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, এখানকার মানুষজন ডেনমার্ক বা আমেরিকা—কারও সঙ্গেই থাকতে রাজি নয়। তাদের একটাই কথা, ‘গ্রিনল্যান্ড কারও কেনা সম্পত্তি নয়’।
সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর থেকেই সেখানকার মানুষের মধ্যে স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আগামী ১১ মার্চে সেখানে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের প্রধান ইস্যু হল ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা লাভ করা।
স্থানীয়দের মতে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলেছে। তারা মনে করেন, ডেনমার্ক তাদের উপনিবেশ তৈরি করে রেখেছে এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষার বিষয়গুলো এখনও ডেনমার্কের হাতে। ট্রাম্প সরাসরি গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন, যা ডেনমার্ককে কিছুটা হলেও শঙ্কিত করে তুলেছিল।
গ্রিনল্যান্ডের মানুষজন তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তারা প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রেখে জীবন ধারণ করে। এখানকার ৫7 হাজারের বেশি মানুষের অধিকাংশই ইনুইট আদিবাসী। তারা বিশ্বাস করে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, দূর্গম এবং অস্পৃশ্য স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও গ্রিনল্যান্ডের গুরুত্ব অনেক। একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তিগুলো আর্কটিকে তাদের কৌশলগত অবস্থান তৈরি করতে চায়, তেমনই গ্রিনল্যান্ডের মূল্যবান খনিজ সম্পদ, যা টেলিযোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয়, এবং বিশাল পরিমাণ অপরিশোধিত তেলের ভাণ্ডার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলতে শুরু করায় নতুন নৌপথ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে, যা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
তবে গ্রিনল্যান্ডের মানুষেরা মনে করে, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ডেনমার্কের কাছ থেকে স্বাধীনতা চায়, কারণ তারা মনে করে, ডেনমার্ক তাদের ইনুইট জনগণের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। এমনকি, ডেনমার্ক সরকার ১৯৫০-এর দশকে শিশুদের তাদের পরিবার থেকে সরিয়ে নেয় এবং ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে নারীদের শরীরে জন্মনিয়ন্ত্রণ ডিভাইস স্থাপন করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিনল্যান্ডের এই স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। স্বাধীনতা পেলে তারা তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতিরক্ষার বিষয়ে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে। এখানকার মানুষজন তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে চায়, যা তাদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে জড়িত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস