যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা, পাল্টা পদক্ষেপ কানাডা ও চীনের
ওয়াশিংটন, (এপি) – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হওয়া এই নীতি অনুযায়ী, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, চীনও এর প্রতিশোধ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প চীনের পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা এখন বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্যের উপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের আরও প্রায় ২৪টি কোম্পানির উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে চীন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর প্রায় ১০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১,৮০০ বিলিয়ন টাকা) সমমূল্যের শুল্ক আরোপ করবে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,৩১০ বিলিয়ন টাকা) মূল্যের পণ্যের উপর এবং পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে বাকি পণ্যের উপর শুল্ক কার্যকর করা হবে। মেক্সিকো এখনই কোনো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেনি, তবে তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে একটি ধ্বংসাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, আমদানি শুল্ক জাতীয় সমৃদ্ধির সহজ উপায়। তিনি এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, রাজনীতিবিদরা হয় অসতর্ক ছিলেন, না হয় বোকা ছিলেন, অথবা অন্য কোনোভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলেই আগে এই অস্ত্র ব্যবহার করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি মূলত মাদক পাচার ও অবৈধ অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলার জন্য নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও কানাডা ও মেক্সিকো উভয় দেশই এই সমস্যা সমাধানে অগ্রগতি করেছে বলে দাবি করেছে, তবুও বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
এই শুল্কনীতি বেশি দিন স্থায়ী নাও হতে পারে, যদি মার্কিন অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, কম্পিউটার চিপস, অটোমোবাইল এবং ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের উপরও শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে খেলনা শিল্পের জন্য এই শুল্ক বৃদ্ধি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ খেলনা চীন থেকে আসে। খেলনা প্রস্তুতকারক গ্রেগ আহের্ন জানান, চীনের কারিগরি দক্ষতা এবং শ্রমের মান রাতারাতি তৈরি করা সম্ভব নয়।
এদিকে, তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (Taiwan Semiconductor Manufacturing Company) যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কানাডার কর্মকর্তারা এখনো মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস