যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের জনসভা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্পিকার জনসন
ওয়াশিংটন ডিসি, [তারিখ]। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার মাইক জনসন রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন তাদের নির্বাচনি এলাকার টাউন হল বা গণশুনানিগুলো এড়িয়ে যান। কারণ, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কর্তৃক ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক হারে অর্থ কাটছাঁট এবং কর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হতে পারে।
বিখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের তত্ত্বাবধানে গঠিত ‘সরকারি কার্যক্রম দক্ষতা বিভাগ’ (Department of Government Efficiency) এই ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে বিভিন্ন রাজ্য ও শহরগুলোতে ফেডারেল কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছেন। ডেমোক্র্যাটরা এই পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন এবং রিপাবলিকানদের সমালোচনা করছেন।
স্পিকার জনসন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা আগেও এমনটা দেখেছি। বিক্ষোভকারীরা পেশাদার, তাই তাদের আলোচনার সুযোগ দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে জনসন মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরেই কথা বলেছেন। ট্রাম্প সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেন, “পেশাদার কিছু লোক” রিপাবলিকানদের জনসভাগুলোতে ভিড় করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ডেমোক্রেট দলের নেতা হাকিম জেফ্রিস এর জবাবে বলেন, “আমাদের ভাড়াটে বিক্ষোভকারীর প্রয়োজন নেই। আমেরিকান জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।”
প্রকৃতপক্ষে, রিপাবলিকানরা এখন এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা সরকারের ব্যয় সংকোচনের কথা বলে এসেছেন, কিন্তু যখন এই কাটছাঁট জনগণের সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারি কর্মীদের ওপর প্রভাব ফেলছে, তখন তাদের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্প ও মাস্কের ‘সরকারি কার্যক্রম দক্ষতা বিভাগ’ হাজার হাজার ফেডারেল কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। তারা সরকারের ‘অপচয়, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ বন্ধের কথা বলছেন। কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা একসময় এমনটা কল্পনাও করতে পারেননি।
কানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর রজার মার্শালের টাউন হলে ছাঁটাই হওয়া সরকারি কর্মীদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সিনেটর মার্শালও বিক্ষোভকারীদের ‘ভাড়াটে’ বলে মন্তব্য করেন।
টাউন হলগুলোতে সৃষ্ট পরিস্থিতি অতীতের বিভিন্ন ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। যেমন—ওবামার স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে বিতর্কের সময় এবং জর্জ ডব্লিউ বুশের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা সোচ্চার হয়েছিল।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে, এই পরিস্থিতি ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার বিক্ষোভের কথা মনে করিয়ে দেয়। সে সময় রিপাবলিকানরা ‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল করতে ব্যর্থ হয় এবং ব্যাপক কর ছাড়ের ঘোষণা দেয়, যার ফলস্বরূপ ডেমোক্র্যাটরা মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
স্পিকার জনসন তার দলের সদস্যদের জনসভার পরিবর্তে ছোট কমিউনিটি প্রোগ্রাম বা টেলিফোন কনফারেন্সের মতো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন, যেখানে ভোটারদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, ডেমোক্রেট দলের নেতা চাক শুমার বলেন, “তারা জনগণের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কারণ তারা জানে তাদের সিদ্ধান্তের কারণে মানুষ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
টেক্সাসের ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান এবং প্রোগ্রেসিভ ককাসের চেয়ারম্যান গ্রেগ কাসার বলেন, “আমার মনে হয়, অনেক রিপাবলিকান সদস্যকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি সত্যিই তাদের এলাকার প্রতিনিধিত্ব করতে চান, যেখানে তারা টাউন হলে এসে জনগণের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে পারবেন, নাকি তারা নিজেদের ‘ইলন মাস্কের কর্মচারী’ হিসেবে পরিচয় দিতে চান।”
ট্রাম্প ও মাস্ক যখন ফেডারেল সরকারে ব্যাপক পরিবর্তন আনছেন, তখন রিপাবলিকান নেতারা সরকারের বিভিন্ন খাতে আরও বেশি কাটছাঁট করার পরিকল্পনা করছেন। তারা খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যখাতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামের ব্যয় কমিয়ে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে চান এবং এর মাধ্যমে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার কর ছাড়ের ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন।
এ দিকে, ‘ইনডিভিজিবল’-এর মতো বিভিন্ন সংগঠন দেশজুড়ে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ।
ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে, রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা সবসময় প্রস্তুত উত্তর দিতে পারছেন না।
সিনেটর মার্শালের মতে, “কিছুটা কষ্ট হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, মানুষ বুঝতে পারছে যে সরকারের প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। আমি মনে করি, ফেডারেল ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্তে সবাই খুশি।”
অন্যদিকে, ওয়াইমিংয়ের সিনেটর সিনথিয়া লুমিস মাস্ক ও তার দলের প্রতি সমর্থন জানালেও চাকরি হারানো কর্মীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, যারা সরকারের কর দেয়, তাদের কথাও ভাবতে হবে। আমাদের সরকার অনেক বড় হয়ে গেছে।”
রিপাবলিকান সিনেটর রিক স্কট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটাই করতে চেয়েছিলেন।” চাকরি হারানোদের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি তাদের জন্য সব ধরনের সহায়তা করব।”
আর্কানসাসের কংগ্রেসম্যান স্টিভ ওম্যাক ‘সরকারি কার্যক্রম দক্ষতা বিভাগ’-কে সমর্থন করেন, তবে এর পদ্ধতি নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। চাকরিচ্যুত কর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ মনে করেন, ক্যান্সার গবেষণা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারের অর্থায়ন অব্যাহত রাখা উচিত। তিনি ইলন মাস্কের নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটা খুবই দরকার ছিল এবং আমি প্রতিদিন তাকে উৎসাহ যোগাই।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস