বসন্তকালে ঘড়ি কেন এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়? যুদ্ধ, বিভ্রান্তি আর সূর্যের আলোর আকাঙ্ক্ষা
আজকাল অনেক দেশেই বসন্তকালে ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে দেওয়া হয়, যা ডেলাইট সেভিং টাইম (Daylight Saving Time) বা ডিএসটি নামে পরিচিত। এর মূল কারণ হলো দিনের আলো বেশি উপভোগ করা। কিন্তু এই পদ্ধতির পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস, যা যুদ্ধের সময় শক্তি বাঁচানোর তাগিদ থেকে শুরু করে মানুষের সূর্যের আলোর প্রতি ভালোবাসার গল্প বলে।
ডিএসটির ধারণাটি প্রথম আসে উনিশ শতকের শেষের দিকে। নিউজিল্যান্ডের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং কীটতত্ত্ববিদ জর্জ ভেরনন হাডসন এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশ নাগরিক উইলিয়াম উইলেট দিনের আলো বেশি উপভোগ করার জন্য এই পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি এই ধারণাটি কাজে লাগায় এবং এর মাধ্যমে তারা বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে এটি সারা বছর ধরে চালু ছিল।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে ডিএসটি পালন করা হয়। এর মধ্যে ইউরোপ, কানাডার অধিকাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ রয়েছে। তবে, রাশিয়া ও এশিয়ার অনেক দেশে এই নিয়ম নেই। যুক্তরাষ্ট্রে হাওয়াই এবং অ্যারিজোনা বাদে সব রাজ্যেই ডিএসটি পালন করা হয়।
তবে, ডিএসটি নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। ঘড়ি পরিবর্তনের কারণে মানুষের ঘুমের সমস্যা হতে পারে এবং সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। অতীতে, বিভিন্ন অঞ্চলে ডিএসটি-র সময়সীমা ভিন্ন হওয়ায় অনেক জটিলতা দেখা দিত। এমনকি, একই শহরের মধ্যে সময়ের পার্থক্য নিয়েও সমস্যা হতো। এই সমস্যা দূর করতে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস একটি আইন পাস করে, যেখানে ডিএসটি-র সময়সীমা এবং নিয়মাবলী নির্দিষ্ট করা হয়।
ডিএসটি-র ভালো দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত সূর্যালোক মানুষকে বাইরে খেলাধুলা ও অন্যান্য কাজে উৎসাহিত করে। অনেকের মতে, সন্ধ্যায় দিনের আলো বেশি থাকলে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো সহজ হয়।
তবে, সব দেশে ডিএসটি-র অভিজ্ঞতা এক রকম নয়। ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি সংকটের সময় সারা বছর ডিএসটি চালু করা হয়েছিল, কিন্তু এর ফল ভালো হয়নি। শীতকালে দেরিতে সূর্য উঠার কারণে অনেকে এর বিরোধিতা করেন।
কানাডার থান্ডার বে শহর ডিএসটি-র ধারণা গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। শহরটি লেক সুপিরিয়রের পাশে অবস্থিত এবং গ্রীষ্মকালে এখানে রাতের বেলাতেও অনেকক্ষণ আলো থাকে। এখানকার মানুষেরা শীতকালে ভ্রমণের জন্য এবং গ্রীষ্মকালে বাড়ির আশেপাশে সময় কাটানোর জন্য ডিএসটি-কে উপভোগ করে।
যদিও বাংলাদেশে ডিএসটি-র প্রচলন নেই, তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর চর্চা হয়। এটি একটি আকর্ষণীয় বিষয়, যা মানুষের জীবনযাত্রার ওপর সময়ের প্রভাবকে তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)।