খাবার তেল নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্ক চলছে, যেখানে একদিকে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন সাধারণ রান্নার তেলকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলছেন, অন্যদিকে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলছেন এর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। সম্প্রতি এই বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যেখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারক এই বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
সাধারণত, বীজ থেকে তৈরি হওয়া এই তেলগুলো ‘সিড অয়েল’ নামে পরিচিত। ক্যানোলা, সয়াবিন, ভুট্টা, সূর্যমুখী, এবং রাইস ব্রান তেল—এগুলো বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। সমালোচকরা এই তেলগুলোকে ‘ক্ষতিকর আটটি’ তেলের তালিকায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগ বৃদ্ধির অভিযোগ আনছেন। তাদের মতে, এই তেলগুলোতে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের আধিক্য এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কেউ কেউ বলছেন, তেল তৈরির প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান মানবদেহের জন্য বিষাক্ত।
তবে, পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, ভোজ্য তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে দশকের পর দশক ধরে গবেষণা হয়েছে এবং তারা এই তেলের ব্যবহারকে সমর্থন করেন। তাদের মতে, এই তেলগুলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা প্রাণীজ চর্বির থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং অন্যান্য গবেষণা সংস্থাগুলি দেখিয়েছে যে উদ্ভিজ্জ তেল ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। সম্প্রতি, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খাবারে উদ্ভিজ্জ তেল বেশি ব্যবহার করেন, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি কম থাকে।
এই বিতর্কের কারণ হলো, খাদ্য তৈরিতে ভোজ্য তেলের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি। বর্তমানে ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে এই ধরনের তেলের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। খাদ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভোজ্য তেলের কারণে নয়, বরং এই ধরনের খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণের ফলেই স্বাস্থ্য বিষয়ক জটিলতা বাড়ে। তাদের মতে, অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং পরিশোধিত শস্যযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশে রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল, নারিকেল তেল এবং ঘিয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহৃত হয়। ভোজ্য তেলের বিতর্ক এখানেও প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে যখন স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং জীবনযাত্রার কথা আসে। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ হলো, খাবারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর তেল নির্বাচন করতে হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা এবং অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্নার তেলের বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।