সিরিয়ায় দুই দিনের সংঘর্ষে ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ফলে গত দুই দিনে ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিহতদের মধ্যে ৭৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া, সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১২৫ জন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং ১৪৮ জন আসাদপন্থী যোদ্ধা।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (অনুমান) উপকূলীয় লাটাকিয়া প্রদেশের জাবলেহ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীদের হামলার মধ্য দিয়ে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিদ্রোহীদের এই সমন্বিত হামলা ছিল দেশটির নতুন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্রোহীদের দমনে সরকার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার সেনা সদস্যকে লাটাকিয়া প্রদেশে পাঠিয়েছে।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহীদের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আল-আলাওয়ি সম্প্রদায়ের মানুষ। বাশার আল-আসাদও এই সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। যদিও আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্প্রদায়ের অনেকের বিরোধ ছিল। নতুন সরকার আলাওয়ি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
লাটাকিয়ার স্ানোবার শহরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বন্দুকধারীরা তার এলাকার অন্তত ১৪ জন প্রতিবেশী, যাদের সবাই আররিস পরিবারের সদস্য ছিলেন, তাদের হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ এবং তার তিন ছেলেও ছিলেন। ওই ব্যক্তি জানান, “বাবা ও ছেলেদের হত্যার পর বন্দুকধারীরা মায়ের কাছ থেকে সোনার গয়না খুলে নিতে বলে, অন্যথায় তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।”
সংঘর্ষের কারণে লাটাকিয়া অঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দারা ঘরবন্দী জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। শহরের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এক বাসিন্দা জানান, “রাস্তায় মৃতদেহ পড়ে আছে। খাবার ও পানির অভাবে মানুষজন চরম কষ্টে আছে। পরিস্থিতি অনেকটা গণহত্যার মতো।”
সংস্থাগুলো বলছে, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন করতে হবে। একইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ এই সহিংসতার নিন্দা করে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারারার বরাত দিয়ে আরব গণমাধ্যম জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে এবং জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান