যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে সম্প্রতি বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রভাব পড়েছে, যার ফলস্বরূপ লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এক নতুন জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনকে রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে অনেকে হতাশ, এবং এর ফলে স্টারমারের প্রতি সমর্থন বাড়ছে।
পর্যবেক্ষক পত্রিকার জন্য ওপিনিয়াম নামক একটি সংস্থার করা জরিপে দেখা যায়, স্টারমারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এক মাসে ১০ শতাংশ বেড়েছে।
বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিষয়গুলোতে লেবার পার্টিকে এখন অনেক বেশি যোগ্য মনে করছেন ভোটাররা।
যেখানে রক্ষণশীল দল, যারা ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিরক্ষা ইস্যুতে শক্তিশালী হিসেবে পরিচিত, তাদের তুলনায় লেবার পার্টির গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।
প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার মনে করেন, যুক্তরাজ্যের প্রতি হুমকি মোকাবিলায় মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় লেবার পার্টি সেরা।
সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ২৭ শতাংশ ভোটার লেবার পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে এই সংখ্যা ২০ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষায় লেবার পার্টিকে এগিয়ে রাখছেন ২৮ শতাংশ ভোটার, যেখানে কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষেত্রে এই হার ১৯ শতাংশ।
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমার প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও লেবার পার্টির ওপর আস্থা রাখছেন অনেকে।
৩২ শতাংশ ভোটার মনে করেন, লেবার পার্টি এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারবে, যেখানে কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ১৬ শতাংশ।
ট্রাম্প ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার কথা জানানোর পর, স্টারমার হাউস অফ কমন্সের এমপিদের কাছ থেকে এই বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ ইউক্রেন সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের প্রতি এবং ৫২ শতাংশ ইইউর প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি মাত্র ১৯ শতাংশ এবং রাশিয়ার প্রতি ৯ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে।
ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে দেশগুলো কতটা ঐক্যবদ্ধ, এমন প্রশ্নের জবাবে ৬৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেন এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ, ৫১ শতাংশ ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ মনে করেন, কিন্তু ২৬ শতাংশ মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এক্ষেত্রে একমত।
ট্রাম্পের ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ৬০ শতাংশ ভোটার মনে করেন, এটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
মাত্র ১৭ শতাংশ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন, আর ২৩ শতাংশ এ বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
সব দলের ভোটারদের মধ্যেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা দেখা গেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেবল ‘রিফর্ম ইউকে’ দলের ভোটারদের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্নমত দেখা যায়।
ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৪%) মানুষ মনে করেন, এমন একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে এক-তৃতীয়াংশ (৩৩%) মনে করেন সম্ভাবনা কম।
এছাড়া, ২৪% মানুষ এ বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি।
যদি যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চুক্তি করতে সক্ষম হয়, তাহলে এর ফল কার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে জানতে চাইলে, ৫৫ শতাংশ মনে করেন, এটি পুতিন এবং রাশিয়ার জন্য বেশি উপকারী হবে।
আর মাত্র ১৭ শতাংশ মনে করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউক্রেন এর প্রধান সুবিধাভোগী হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান