মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, চীন বাণিজ্য নিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে, যা বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, কানাডা ও মেক্সিকোর নেতারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে ব্যস্ত, তখন বেইজিং আলোচনা সরাসরি এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগের বাণিজ্য যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, চীন এবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মোকাবিলায় প্রস্তুত। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পর, চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য শিল্প সামগ্রী। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করেছে, চীনও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
তারা মার্কিন কৃষিপণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে এবং কিছু মার্কিন কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিং আলোচনার পথ খোলা রাখার জন্য কিছুটা সংযম দেখাচ্ছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে থাকা শি জিনপিং, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মতোই দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যও পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।
এই কারণে, তিনি এখনই ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে রাজি নন। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কূটনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল রাসেল মনে করেন, এটি চীনের জন্য দর কষাকষির একটি কৌশল।
যদি অপমানিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে শি জিনপিং আলোচনায় বসতে চাইবেন না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “চীন দ্রুত, তবে বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রতিটি শুল্কের জবাব দিচ্ছে।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “কোনো দেশ যদি মনে করে যে তারা চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেও চীনকে দমিয়ে রাখতে পারবে, তবে তাদের এই ধারণা ভুল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে চাইলে চীন প্রস্তুত, কিন্তু চাপ দিতে থাকলে চীনও দৃঢ়ভাবে জবাব দেবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ট্রাম্পের কৌশল চীনের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না। চীন আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রস্তুত। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়েছে এবং বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি করা হতো, এখন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সেই সয়াবিন কেনা হচ্ছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবামও যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে, তাদের দেশগুলোর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
চীন মনে করে, ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে কোনো লাভ হয়নি। এর ফলস্বরূপ, তারা এখন দৃঢ়ভাবে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছে।
বাণিজ্য যুদ্ধের এই নতুন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন আসায়, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
তাই, এই বাণিজ্য যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখা জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস