শিরোনাম: নামকরা সঙ্গীত বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ, মুখ খুললেন অপেরা শিল্পী
১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাজ্যের একটি স্বনামধন্য সঙ্গীত বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, এমন অভিযোগ এনেছেন প্রখ্যাত অপেরা শিল্পী ইডিট আরাদ। ঘটনার দীর্ঘকাল পরে তিনি মুখ খুলেছেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ইসরায়েল থেকে আসা তরুণী ইডিট আরাদ ১৯৮৭ সালে লন্ডনের গিল্ডহল স্কুল অফ মিউজিক অ্যান্ড ড্রামাতে স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল ধ্রুপদী সঙ্গীতে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া। কিন্তু বিধি বাম! তার শিক্ষক, যিনি বয়সে ছিলেন তার চেয়ে অনেক বড়, তিনি তার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং কুৎসিত আচরণ করতে শুরু করেন।
ইডিট জানিয়েছেন, পল রবার্টস নামের ওই শিক্ষক প্রথম ক্লাস থেকেই তার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দিতেন। তিনি ইডিটকে কফি ও ডিনারে আমন্ত্রণ জানান এবং তার প্রতিভার প্রশংসা করে একাধিক চিঠি লেখেন। চিঠিগুলোতে তিনি ইডিটকে “ডাইনি” সম্বোধন করতেন এবং যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দিতেন। এমনকি স্কুলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও তাদের সম্পর্কের কথা জানত, কিন্তু তারা রবার্টসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
দীর্ঘদিন পর, গিল্ডহল স্কুল অবশেষে তাদের গাফিলতির জন্য ইডিট আবাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তারা রবার্টসের আচরণকে “ভয়ঙ্কর এবং সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য” হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার অভাব স্বীকার করেছে। কনসার্ট পিয়ানোবাদক রবার্টস, যিনি ঘটনার পরও প্রায় ৩০ বছর ওই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন, ২০২১ সালে ইডিটের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তের শুরুতে বরখাস্ত হন।
গিল্ডহল এখন ইডিটকে জানিয়েছে যে তার অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেছে এবং তদন্তে রবার্টসের আচরণকে “গুরুতর অসদাচরণ” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি যদি ততদিনে পদত্যাগ না করতেন, তবে তাকে অবশ্যই বরখাস্ত করা হতো। এছাড়াও, তার ফেলোশিপও বাতিল করা হয়েছে। রবার্টস বর্তমানেও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন এবং এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইডিট বলেন, “গিল্ডহল যে আমার কাছ থেকে এই বিষয়ে তথ্য গোপন রেখেছিল, তা আমাকে সম্পূর্ণভাবে হতবাক করেছে।
তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শিক্ষকদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় একাডেমিতে এ ধরনের অসদাচরণ এবং নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ২০২৩ সালে, প্রখ্যাত সেলোবাদক জুলিয়ান লয়েড ওয়েবার রয়্যাল কলেজ অফ মিউজিকের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরে তরুণ শিক্ষার্থীদের সরাসরি সঙ্গীত শিক্ষা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইডিট আরাদ মনে করেন, তার অভিজ্ঞতা এবং গিল্ডহলের দেরিতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর বিষয়টি সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের আরও ভালোভাবে সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তিনি বলেন, “সঙ্গীতের জগতে এ ধরনের আচরণ এখনও বিদ্যমান।
ক্ষমতার অধিকারী পুরুষরা তরুণী শিল্পীদের কাছ থেকে যৌন সুবিধা পাওয়ার প্রত্যাশা করে।
একজন পরিণত, আত্মবিশ্বাসী নারীর পক্ষে এই ধরনের ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব, কিন্তু একজন তরুণ শিক্ষার্থীর জন্য পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ইডিট আরও বলেন, “আমি চাই, তরুণ প্রজন্মের দায়িত্বে থাকা সকল সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করুক, যেখানে তারা কোনো ধরনের অনুপযুক্ত আচরণ বা নির্যাতন না করার অঙ্গীকার করবেন।
একইভাবে, শিক্ষার্থীদেরও এমন আচরণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং এর সম্মুখীন হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে জানাতে হবে।
ইডিটের সঙ্গীত প্রতিভা ইসরায়েলে থাকতেই চিহ্নিত হয়েছিল। তিনি স্কুল কোয়ারে গান করতেন এবং সেলো বাজাতেন। একটি “কোর ক্যাম্প”-এ তার ব্যতিক্রমী কণ্ঠস্বর তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ অর্জনে সহায়তা করে।
পুরস্কার জেতার পর, তিনি বিখ্যাত সঙ্গীত শিক্ষক ভেরা রোজার নজরে আসেন, যিনি কেরি তে কানাওয়ার মতো শিল্পীকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
ইডিটকে রোজার সঙ্গে লন্ডনে তার বাড়িতে পড়াশোনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
কিন্তু প্রথম সেমিস্টারে রবার্টসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার জীবন পাল্টে যায়। তিনি উপহার পাঠাতেন এবং চিঠি লিখতেন। রবার্টসের লেখা কয়েকটি চিঠিতে যৌন ইঙ্গিত ছিল।
এক পর্যায়ে তিনি গান গাওয়া প্রায় ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন।
ইডিট এখন মনে করেন, রবার্টসের আচরণ ছিল সম্পূর্ণভাবে অনুপযুক্ত।
তিনি বলেন, “আমি একা ছিলাম এবং তিনি ভালোবাসার ভান করে ও মিথ্যা কথা বলে আমাকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।
বর্তমানে ৫৬ বছর বয়সী ইডিট, গিল্ডহল ত্যাগ করার পরে রবার্টসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
তিনি পেশাগতভাবে গান করা চালিয়ে যান এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
তার মতে, রবার্টসের সঙ্গে তার প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা তার শিল্পী জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলেছে।
ইডিট বলেন, “আমি মনে করি, আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এই ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি তার অতীতের সেই খারাপ অভিজ্ঞতার কথাগুলো প্রকাশ করে, কর্তৃপক্ষের কাছে সঠিক বিচার চেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান