যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ: সমতার প্রশ্নে উদ্বেগে বিশেষজ্ঞরা
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে শিক্ষা বিভাগের কর্মীর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। এরপর বিভাগটি পুরোপুরি বিলুপ্ত করারও ঘোষণা আসে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা বিভাগের এই ধরনের সংস্কার দরিদ্র শিক্ষার্থী, ইংরেজি শেখার প্রক্রিয়াধীন শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং সংখ্যালঘুদের জন্য সুযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের মূল লক্ষ্য হলো—প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। ১৯৮০ সালে বিভাগটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছিল। কিন্তু এই বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়লে, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষা বিভাগ দুর্বল হয়ে পড়লে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ হওয়া সরকারি তহবিলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হবে। শিক্ষা বিভাগের কর্মীরা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে রাজ্য সরকারগুলো তাদের নিজেদের মতো করে এই অর্থ খরচ করতে পারে, যা বিদ্যমান বৈষম্য আরও বাড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাখাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘টাইটেল ওয়ান’ তহবিল। এই তহবিলের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন করা স্কুলগুলোতে সহায়তা করা হয়। পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষক এবং ছোট ক্লাসরুমের প্রয়োজন হয়, যা অনেক সময় স্থানীয় সরকারগুলোর জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষাখাতে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ করা বন্ধ করে দেয়, তবে রাজ্য সরকারগুলো তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে। এতে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে মিসিসিপি, সাউথ ডাকোটা, আরকানস, মন্টানা এবং আলাস্কার মতো রাজ্যগুলোতে এর প্রভাব বেশি পড়তে পারে, কারণ এসব রাজ্যের স্কুলগুলোর শিক্ষা তহবিলের ২০ শতাংশের বেশি আসে ফেডারেল সাহায্য থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের অধীনে থাকা ‘অফিস ফর সিভিল রাইটস’-এর মূল কাজ হলো—প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী এবং সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা। কিন্তু এই বিভাগের দুর্বলতার কারণে অনেক সময় অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, শিক্ষা বিভাগের দুর্বলতা সত্ত্বেও এর বিলুপ্তি বাস্তব দুনিয়ায় খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য অনেক রাজ্যে এখনো বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস