শিরোনাম: ট্রাম্পের মিথ্যাচার: কানাডা সম্পর্কে ভুল তথ্য, শুল্ক নিয়ে বিভ্রান্তি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডার বাণিজ্য নীতি নিয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে দাবি করেন, কানাডা বিশ্বের অন্যতম উচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশ। তবে বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, ট্রাম্পের এই দাবি সম্পূর্ণ ভুল।
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কানাডার গড় শুল্ক হার (১.৩৭%) যুক্তরাষ্ট্রের (১.৪৯%) চেয়ে কম ছিল ২০২২ সালে। এই একই সময়ে, বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে শুল্ক হারের দিক থেকে কানাডার অবস্থান ছিল ১০২তম। উদাহরণস্বরূপ, বারমুডার শুল্ক হার ছিল ২৯.৫২%, ভারতের ১১.৪৬%, দক্ষিণ কোরিয়ার ৮.৬৩%, ব্রাজিলের ৭.৪৪%, মেক্সিকোর ৪.৭৫%, চীনের ৩.০৯%, যুক্তরাজ্যের ৩.০৭% এবং জাপানের ১.৬৪%।
বিভিন্ন উপায়ে একটি দেশের সামগ্রিক শুল্ক চিত্র মূল্যায়ন করা যায়, কিন্তু অন্য কোনো মানদণ্ডেও কানাডার অবস্থান শীর্ষের কাছাকাছি নয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে কানাডার গড় শুল্ক হার ছিল ১.৮৩%, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ছিল ২.৭২%।
অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাটো ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট লিনসিকম এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের এই দাবিকে ‘অর্থহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, কানাডার বাণিজ্য নীতি অত্যন্ত উদার।
ট্রাম্প তার পোস্টে কানাডার দুগ্ধ পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের কথা উল্লেখ করেছেন, যা ২৫০%-এর বেশি। তবে তিনি এটাও উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন যে, এই শুল্ক তখনই কার্যকর হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্কমুক্ত দুগ্ধ পণ্য কানাডায় রপ্তানি করে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সেই কোটা পূরণ করতে পারছে না, ফলে এই শুল্কও কার্যকর হচ্ছে না।
অন্যদিকে, ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডগলাস আরউইন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যেকার বাণিজ্যের একটি বিশাল অংশ কয়েক দশক ধরে শুল্কমুক্ত। মার্কিন কৃষি বিভাগও উল্লেখ করেছে যে, ১৯৯৪ সালে কার্যকর হওয়া নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের (নাফটা) অধীনে কানাডায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব কৃষি পণ্যের রপ্তানিতে কোনো শুল্ক বা কোটা ছিল না, যা এখনো ইউএসএমসিএ চুক্তির অধীনে অব্যাহত রয়েছে।
কানাডার সি.ডি. হাও ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল শওয়ানেইন বলেছেন, কানাডার দুগ্ধ ও পোল্ট্রি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের কারণে ট্রাম্পের বক্তব্যে “কিছুটা সত্যতা” থাকতে পারে, তবে সাধারণভাবে এটি ভুল। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ক্ষেত্রে কানাডার শুল্ক হার বেশি—এমন ধারণা সঠিক নয়।
ট্রাম্পের এই মিথ্যাচারের কারণ হলো, তিনি সম্প্রতি কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, কানাডার অন্টারিও প্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রাজ্যে বিদ্যুতের রপ্তানির ওপর ২৫% সারচার্জ আরোপ করেছে। যদিও অন্টারিওর প্রধানমন্ত্রী পরে এই সারচার্জ স্থগিত করেন এবং ট্রাম্পও তার শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
ট্রাম্প এমনকি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করারও আহ্বান জানিয়েছেন, যা কানাডার জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন