যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন নিয়ে নতুন করে আলোচনার পালে হাওয়া লেগেছে। একদিকে যেমন এই যুদ্ধের দ্রুত অবসানের একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তেমনই বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব নিয়েও চলছে নানা জল্পনা। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা রাশিয়া এবং ইউক্রেন—উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
রাশিয়ার সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন একটা পরিবর্তনের সুর শোনা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হলে হয়তো যুদ্ধের একটা ইতি টানা যেতে পারে। বিশেষ করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উষ্ণ হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের বাসিন্দা এবং মনোবিজ্ঞানী ক্যাথরিন বলেন, “আমার ক্লায়েন্টরা এখন বলছেন, আমেরিকানরা আবার আমাদের পক্ষে আসছে। এটা ভালো খবর, কারণ আমেরিকা তো একটা দারুণ দেশ।”
এই পরিবর্তন শুধু সাধারণ মানুষের মধ্যেই নয়, রাজনৈতিক মহলেও অনুভূত হচ্ছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সম্প্রতি রুশ সাংবাদিকদের বলেছেন, “নতুন মার্কিন প্রশাসন দ্রুত পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন আনছে। এটা আমাদের ধারণার সঙ্গে মিলে যায়।” তিনি আরও যোগ করেন, সামরিক সহায়তা বন্ধ করা হলে “কিয়েভ সরকারকে শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া যাবে।”
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন অবস্থান নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পের নীতি সব সময় স্পষ্ট নয়। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যেও এই বিষয়ে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনার জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং সামরিক শক্তি কমাতে হবে। রাশিয়া চায়, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি চীন, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কাতারের মতো দেশগুলোও এই চুক্তির প্রতি সমর্থন জানাক।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এই নমনীয় মনোভাব ইউক্রেন এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আন্তর্জাতিক সংকট গ্রুপের সিনিয়র বিশ্লেষক ওলেগ ইগনায়েতভ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ইউক্রেনের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব থাকলে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর এর অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম, বাণিজ্য এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা