খেলাধুলার জগতে কর্পোরেট আগ্রাসন: ফুটবলের আত্মা কি হারাচ্ছে?
বর্তমান বিশ্বে, ফুটবল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা। এই খেলার প্রতি মানুষের ভালোবাসা কেবল মাঠের খেলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, সংস্কৃতি এবং একটি শক্তিশালী কমিউনিটি। তবে, সময়ের সাথে সাথে এই খেলার বাণিজ্যিকীকরণ একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো বিখ্যাত একটি ক্লাবের পরিচালনা এবং কর্মপদ্ধতি নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ইনোস কম্পাস: কর্পোরেট সংস্কৃতির এক ঝলক
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নতুন মালিকানার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ‘ইনোস কম্পাস’। এই কর্পোরেট কাঠামোটি ক্লাবটির কার্যকারিতা এবং কর্মপরিবেশ কেমন হবে, সেই ধারণা দেয়। তবে, সমালোচকদের মতে, এই ধরনের কর্পোরেট কৌশল ফুটবলের ঐতিহ্য এবং মানবিক দিকটিকে দুর্বল করে দেয়। “আমরা যা পছন্দ করি” এবং “যা পছন্দ করি না” – এমন কিছু শব্দের তালিকা তৈরি করে, যেন একটি সরলীকৃত উপায়ে ক্লাবের সংস্কৃতি নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, তারা ‘নো হিউম্যান ইজ লিমিটেড’ (কোনো মানুষ সীমাবদ্ধ নয়) – এই ধরনের ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করে, যা মাঠের খেলোয়াড়দের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনার সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক। এছাড়াও, ‘ওয়াক দ্য টক’, ‘সোশ্যাল স্কিলস’, ‘হাইড্রোজেন’, ‘বিয়ার’ এর মতো শব্দগুলো তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু ‘বোরিং’, ‘হাইড করা’, ‘কুইটার’ – এর মতো শব্দগুলো তারা অপছন্দ করে। এই ধরনের কর্পোরেট কাঠামো খেলাটির আসল সৌন্দর্যকে যেন চাপা দিয়ে দেয়।
ফুটবলের কমিউনিটি এবং ঐতিহ্য
ফুটবলের আসল আকর্ষণ এর কমিউনিটিতে নিহিত। খেলার মাঠ, সমর্থক এবং খেলোয়াড় – সবাই মিলে একটি পরিবারের মতো। খেলোয়াড়দের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, মাঠের বাইরের জীবন এবং সমর্থকদের আবেগ – এই সবকিছু মিলেই ফুটবল একটি বিশেষ স্থান তৈরি করে।
এই প্রসঙ্গে, হাঙ্গেরিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি, ফেরেঙ্ক পুসকাসের কথা মনে আসে। যিনি খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে ফুটবলকে ভালোবাসতেন। তাঁর জীবন থেকে আমরা বুঝতে পারি, খেলার প্রতি ভালোবাসা এবং কমিউনিটির গুরুত্ব কতখানি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যখন ক্লাবগুলো মুনাফার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, তখন ফুটবলের এই ঐতিহ্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। টিকিট-এর দাম বৃদ্ধি এবং ক্লাবের দুর্বল পারফরম্যান্স, সমর্থকদের হতাশ করে তোলে।
উপসংহার
ফুটবল একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। তবে, এই বাণিজ্যিকীকরণের যুগেও ফুটবলের ‘আত্মা’ টিকিয়ে রাখা জরুরি। কমিউনিটি এবং খেলোয়াড়দের মধ্যেকার সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে। কর্পোরেট সংস্কৃতির নামে ফুটবলের ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।