মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ওয়াইনের ওপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও মার্কিন হুইস্কির ওপর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের ওয়াইন ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি মার্কিন হুইস্কির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে এর জবাবে ট্রাম্প ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশ থেকে আসা ওয়াইন, শ্যাম্পেন ও অ্যালকোহলযুক্ত পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন।
এই বিশাল শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় ওয়াইনের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওয়াইন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রনি স্যান্ডার্স বলেন, “আমার মনে হয় না গ্রাহকরা তাদের পছন্দের ওয়াইন বা শ্যাম্পেনের জন্য দুই থেকে তিনগুণ বেশি দাম দিতে প্রস্তুত।”
যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় ওয়াইনের একটি বড় বাজার রয়েছে।
২০২০ সালে, চীন অস্ট্রেলীয় ওয়াইনের ওপর ২১৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছিল, যার ফলে অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন রপ্তানি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
সেই ঘটনার উদাহরণ টেনে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের শুল্ক বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত অ্যালকোহল পানীয় বিক্রি হয়েছে, তার মধ্যে ১৭ শতাংশ এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে।
এর মধ্যে ইতালির ওয়াইন ছিল ৭ শতাংশ এবং ফরাসি ওয়াইন, কগন্যাক ও ভদকা ছিল ৫ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ২৬.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিদেশি মদ আমদানি করেছে, যা দেশটির মোট কৃষি আমদানির ১৪ শতাংশ।
একই বছর তারা ৩.৯ বিলিয়ন ডলারের মদ রপ্তানি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইতালির কৃষি সংস্থা কোল্ডিরেত্তির প্রেসিডেন্ট এত্তোরে প্রানদিনি বলেছেন, “আমাদের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি বন্ধ করতে হবে, যা একটি বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রথম শিকার হবে মার্কিন নাগরিকরা, যারা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হবে।”
ফ্রান্সের ওয়াইন ও স্পিরিট রপ্তানিকারক ফেডারেশনের প্রধান গ্যাব্রিয়েল পিকার্ড বলেছেন, ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে তা ফরাসি অ্যালকোহল রপ্তানি শিল্পের জন্য “মর্মান্তিক আঘাত” হবে এবং এর ফলে কয়েক লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প সম্ভবত সত্যিই এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেবেন কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
এই বাণিজ্য বিরোধের সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।
তাই এই ধরনের ঘটনা বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি করলে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশেষ করে, আমদানি-রপ্তানি এবং পণ্যের মূল্যের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস