বরফের দেশ না হয়েও, শীতকালীন খেলার স্বপ্ন: ববস্লেড ও স্কেলেটনে বিশ্বজয়
শীতকালীন খেলাধুলার জগৎ, বিশেষ করে ববস্লেড (Bobsled) এবং স্কেলেটন (Skeleton), সাধারণত পরিচিত তুষারাবৃত দেশগুলোর একচেটিয়া আধিপত্যের জায়গা হিসেবে। জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রিয়া, ইতালির মতো দেশগুলো বহু বছর ধরে এই খেলাগুলোতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। তবে, সম্প্রতি এই খেলার চিত্রটা ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। এমন কিছু দেশ, যেখানে হয়তো কখনো তুষারপাত হয় না, তারাও এখন এই প্রতিযোগিতায় নাম লিখাচ্ছে, বিশ্বকে নতুন করে চমক দেখাচ্ছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের লেক প্লাসিডে (Lake Placid) অনুষ্ঠিত হওয়া ববস্লেড ও স্কেলেটন চ্যাম্পিয়নশিপে (Bobsled and Skeleton Championships) এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেছে। ৩৮টি দেশের খেলোয়াড়েরা এখানে অংশ নিয়েছিল, যা এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। এদের মধ্যে জ্যামাইকা, মাল্টা, ঘানা, মালয়েশিয়া, এমনকি স্পেন, কলম্বিয়া, ইসরায়েল, ব্রাজিল এবং তাইওয়ানের মতো দেশগুলোও ছিল, যাদের শীতকালীন খেলার তেমন কোনো ঐতিহ্য নেই।
জ্যামাইকার ববস্লেড দলের গল্পটা তো সবার জানা। ১৯৮৮ সালের ক্যালগারি অলিম্পিকে (Calgary Olympics) তাদের অংশগ্রহণের কাহিনী নিয়ে নির্মিত ‘কুল রানিংস’ (Cool Runnings) সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয়। এবার সেই অনুপ্রেরণা থেকেই যেন নতুন করে পথচলা শুরু হয়েছে। জ্যামাইকার ১৭ বছর বয়সী ববস্লেড খেলোয়াড় আডানা জনসন (Adanna Johnson) বলেন, “আমি খুব খুশি যে আরো বেশি দেশ এখানে আসছে এবং এই খেলা বাড়ছে। অলিম্পিকের কারণে বড় দেশগুলো থেকে মাত্র তিনটি করে দল অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, ফলে ছোট দেশগুলো ভালো র্যাঙ্কিংয়ে আসার সুযোগ পায়।”
আসলে, অলিম্পিকে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর দেশগুলোর জন্য কিছু বিশেষ সুযোগ থাকে। এর ফলে, আমেরিকান সামোয়া, বারমুডা, গ্রিস, ভারত, আয়ারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, পুয়ের্তো রিকো, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, টোঙ্গা এবং ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জদের মতো দেশগুলোও এই খেলার মঞ্চে নিজেদের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
মালয়েশিয়ার হয়ে স্কেলেটন খেলোয়াড় জোনাথন ইয়াওয়ের (Jonathan Yaw) কথাই ধরা যাক। তিনি একজন সাবেক হ্যান্ডবল খেলোয়াড়, যিনি মালয়েশিয়ার হয়ে খেলেন, কারণ তার জন্ম সেখানেই এবং তার বাবার দেশও এটি। ২০১৮ সালের পিয়ংচাং গেমসের (Pyeongchang Games) পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীতকালীন খেলাধুলা প্রসারের জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল, যা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
ইয়াও লেক প্লাসিডে ২৯তম স্থান অর্জন করেছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের খেলার ভালো কিছু প্রতিনিধি আছে। খেলার মধ্যে কিছু অহংকার থাকে, তবে আমি দেখাতে চাই যে নম্র হওয়াও সম্ভব। কঠোর পরিশ্রম করে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং শিশুদের জন্য ভালো উদাহরণ তৈরি করা যায়।”
মাল্টার হয়ে স্কেলেটন খেলোয়াড় শ্যানন গালেও (Shannon Galea)। তার বাবা ও ঠাকুরদার সূত্রে মাল্টার নাগরিকত্ব রয়েছে। তিনিও এখন অলিম্পিকে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, “শেষ স্থান পাওয়াটা আনন্দের নয়, তবে আমি ভাগ্যবান যে এখানে সবাই আমাকে সমর্থন করে।”
এই খেলাগুলোতে ঐতিহ্যগতভাবে জার্মানির মতো দেশগুলোর দাপট থাকলেও, চীনের মতো দেশগুলোও এখন বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে এই খেলার উন্নতি ঘটাচ্ছে। ব্রাজিলের নিকোল রোচা সিলভেইরা (Nicole Rocha Silveira) দুটি মহিলা স্কেলেটন বিশ্বকাপ পদক জিতেছেন। ইউক্রেনের ভ্লাদিস্লাভ হেরাাস্কেভিচও (Vladyslav Heraskevych) এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন।
এই নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পেছনে রয়েছে ক্রীড়াবিদদের কঠোর পরিশ্রম ও স্বপ্ন। তাদের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, ইচ্ছা থাকলে, যেকোনো প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস