মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলস্বরূপ রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির অর্থনীতিতে মন্দা আসন্ন। সরকারি কর্মীদের চাকরি হারানোর কারণে শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আবাসন খাতে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।
অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার উপক্রম হয়েছে, এমনকি বাড়িঘরও ছাড়তে হচ্ছে অনেককে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দপ্তরগুলোতে কয়েক দশক ধরে কাজ করেন এমন কর্মীদের চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ওয়াশিংটন ডিসির অর্থনীতিতে।
সরকারি কর্মীদের মধ্যে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অনেকেই এখন নতুন চাকরির সুযোগ খুঁজছেন, কিন্তু বাজারের পরিস্থিতি বেশ কঠিন।
আর্থিক সংকটে পড়া টাইলার উলফ নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতেন। সম্প্রতি তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
তিনি জানান, এই বছর তিনি তার বান্ধবীর সঙ্গে একটি নতুন বাসায় উঠবেন বলে ঠিক করেছিলেন, কিন্তু এখন তাকে পুরনো আবাসস্থল ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছে ভার্জিনিয়াতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এছাড়া, তিনি এখন খরচও কমিয়ে দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের কারণে ওয়াশিংটন ডিসির অর্থনীতিতে মন্দা ২০২৩ সালের মধ্যেই শুরু হতে পারে। কারণ, সরকারি কর্মীদের বেতন কমে যাওয়ায় তাদের কেনাকাটার পরিমাণও হ্রাস পাবে, যা স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আরেকজন ভুক্তভোগী হলেন অ্যালেক্সান্দ্রা রেইড। তিনি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথে প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতেন। চাকরি হারানোর পর তার পরিবারের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সংসার চালাতে এখন তাকে সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসির একটি জনপ্রিয় ক্যাফে ‘টিমগাদ ক্যাফে’র মালিক মিলুদ বেনজারগা জানান, কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে তার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
ডিসি চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট চিনিয়েরে হাববার্ড জানিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের সদস্যপদ লাভের আগ্রহ বেড়েছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়।
অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম কামিন্স মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কারণে খুচরা ব্যবসা ও আতিথেয়তা খাতের ওপর দ্রুত প্রভাব পড়বে। এছাড়াও, এই মন্দা বছরের মাঝামাঝি সময়ে আরও বিস্তৃত হতে পারে।
আবাসন বাজারের চিত্রও হতাশাজনক। রিয়েলটর ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিক্রয়ের জন্য তালিকাভুক্ত বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
এর কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, অনেকে চাকরি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
টাইলার উলফের মতো অনেকেই এই পরিস্থিতিতে হতাশ। তবে তারা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে এবং নতুন করে জীবন শুরু করতে আত্মবিশ্বাসী।
তথ্যসূত্র: সিএনএন