মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিনিপন্থী এক শিক্ষার্থীর আটকের ঘটনায় সেখানকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
কলম্বিয়া ল’ স্কুলের অভিবাসী অধিকার ক্লিনিকের প্রধান এলরা মুখার্জি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা এখন সাধারণ বিষয়েও জানতে চাচ্ছে, তাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত না। এমনকি তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্ট করা উচিত কিনা, কিংবা কোনো বিক্ষোভে অংশ নেওয়া উচিত কিনা, সে বিষয়েও জানতে চাচ্ছে।
মুখার্জির মতে, গত এক সপ্তাহ আগেও যা স্বাভাবিক ছিল, এখন তাই উদ্বেগের কারণ।
গত সপ্তাহে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাহমুদ খলিল নামের এক ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়। খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
তিনি একজন শরণার্থী এবং তার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। তবে, নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আদালত আপাতত তার বিতাড়ন স্থগিত করেছে।
খলিলের আটকের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীতির সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খলিলের মামলাটি আন্তর্জাতিক ছাত্র, বিশেষ করে ভিসা ও গ্রিন কার্ডধারীদের জন্য ভীতিকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি আরও বলেন, খলিলকে যদি বিতাড়িত করা হয়, তবে এর মাধ্যমে পুরো জাতির জন্য একটি খারাপ নজির সৃষ্টি হবে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৪ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মুখার্জি জানিয়েছেন, অভিবাসী অধিকার ক্লিনিক উদ্বেগে থাকা শিক্ষার্থীদের আপাতত লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের নজরে না আসে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কাগজপত্রবিহীন ব্যক্তিরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত।
তাদের মনে হচ্ছে, পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খলিলকে ‘একজন উগ্রপন্থী বিদেশি হামাসপন্থী’ এবং ‘সন্ত্রাসী, ইহুদিবিদ্বেষী ও আমেরিকানবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এটি কেবল শুরু, এরপর আরও অনেককে গ্রেপ্তার করা হবে।’
খলিলের আটকের পর, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও অভিবাসন বিভাগ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে এবং বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা নিষিদ্ধ করতে বলেছে।
তাছাড়া, বিক্ষোভের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চাইছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০০ শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী খলিলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের নিন্দা জানান।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের এমন কঠোর মনোভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সরকার তাদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করবে এবং এর ফলে প্রতিবাদ কমে যাবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন