আর্থিক সুরক্ষা সংস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে কি আবার ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বাড়বে?
যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরো (Consumer Financial Protection Bureau – CFPB) একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, যা ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার পর গঠিত হয়েছিল। এই সংস্থার মূল কাজ হলো ব্যাংক, ঋণ প্রদানকারী সংস্থা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে গ্রাহকদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করে, তা নিশ্চিত করা।
কিন্তু বর্তমানে এই সংস্থার কার্যক্রম সীমিত করার চেষ্টা চলছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপে সিএফপিবি-র কর্মীরা কাজ করা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, যদিও পরে আদালতের হস্তক্ষেপে সেই নির্দেশ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি কমে যাওয়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি আবারও ২০০৮ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভিন্ন।
ব্যাংক এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়া নিয়মকানুন রয়েছে এবং ঋণ গ্রহণকারীরাও আগের তুলনায় বেশি সুরক্ষিত।
তবে, সিএফপিবি-র মতো একটি সংস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকি বাড়ে। কারণ, এই সংস্থাটি অনেক সময় গ্রাহকদের সুরক্ষার ঢাল হিসেবে কাজ করে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন গ্রিফিন মনে করেন, আর্থিক সংকটের সময় অনেক গ্রাহক প্রতারিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সিএফপিবি দুর্বল হয়ে পড়লে ছোট আকারের আর্থিক লেনদেনে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির শিকার হতে পারেন।
এই সংস্থাটি অন্যায় ফি অথবা ভুল আর্থিক লেনদেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
সিএফপিবি-র দুর্বল হয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডেমোক্রেট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন। তিনি বলেছেন, “ভোক্তা সুরক্ষা দুর্বল করে এবং একইসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঝুঁকি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলে তা খুবই বিপদজনক হবে।
সাধারণ পরিবারগুলো অতীতে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি সমর্থন করতে পারে না।”
আবাসন ঋণের বাজার এখন আগের চেয়ে নিরাপদ হলেও, সিএফপিবি-র ক্ষমতা কমানো হলে গ্রাহকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুরক্ষা কমে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কনজিউমার অ্যাডভোকেটস-এর নির্বাহী পরিচালক আইরা রেইনগোল্ডের মতে, ডড-ফ্রাঙ্ক আইন পাস হওয়ার পর বন্ধকী ঋণের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এর ফলে ২০০৮ সালের সংকট তৈরি করেছিল যে ধরনের ঋণ, এখন সেই ধরনের ঋণ দেওয়া কার্যত অসম্ভব।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের একটি প্রধান কারণ ছিল ব্যাংক এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো এমন অনেক মানুষকে ঋণ দিয়েছিল, যাদের সেই ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য ছিল না।
এর ফলস্বরূপ, বাড়ির দাম কমে গিয়েছিল এবং বহু মানুষ তাদের বাড়ি হারিয়েছিলেন।
আবাসন খাতে সুরক্ষার জন্য আর্থিক সংকট পরবর্তী সময়ে আরও কিছু আইন তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ঋণের ক্ষেত্রে আরও কঠোর মানদণ্ড এবং ঋণ গ্রহীতাদের জন্য আরও স্বচ্ছ তথ্য সরবরাহ করা।
বর্তমানে, যারা বাড়ি কেনার জন্য ঋণ নিতে চাইছেন, তাদের ঋণের শর্তগুলো ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। সুদের হার প্রায় ৭ শতাংশের কাছাকাছি থাকার কারণে, বিভিন্ন ঋণদাতার কাছ থেকে অফার যাচাই করে সবচেয়ে ভালো শর্তটি বেছে নেওয়া প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে, গ্রাহকদের আরও সচেতন হতে হবে। কোনো লুকানো ফি আছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সিএফপিবি-র দুর্বলতার কারণে এখন হয়তো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে আরও বেশি উৎসাহিত হবে।
আর্থিক সুরক্ষার বিষয়টি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের দেশেও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সচেতন থাকা এবং তাদের অধিকার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, তা সিএফপিবি-র কাছে জানানো যেতে পারে। এছাড়াও, বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলোর কাছেও অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন